সংবাদ শিরোনাম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রসিকিউশনকে মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পলাতক আসামির মৃত্যুর সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন ২ বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন। এ সময় আদালতে চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর হায়দার আলী ও ঋষিকেষ সাহা উপস্থিত ছিলেন।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহিদুল আলম ঝিনুক জানান, আসামি পলাতক থাকায় মৃত্যুর বিষয়ে অবহিত করাটা পুলিশের দায়িত্ব ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজীব জানান, মৃত্যুর তথ্য তাদের কাছে থাকলেও তা যাচাই করতে কিছুটা সময় লেগেছে। তবে অভিযোগ গঠনের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না।

আদালতের আদেশের বিষয়ে প্রসিকিউটর হায়দার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে না। এটা আইন বিরুদ্ধ কাজ। আদালত আমাদের মৌখিকভাবে এ বিষয়ে যাদের গাফিলতি আছে তা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

অপরদিকে আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর বিষয় ট্রাইব্যুনাল আমাকেও খতিয়ে দেখতে বলেছেন।

এর আগে বুধবার একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনে ‘মৃত ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে ওয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের ৭ মাস আগেই মারা গেছেন।

একাত্তরের হত্যা, গণহত্যা মামলার আসামি ওয়াজ উদ্দিন। তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের অক্টোবরে তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা। শুরু থেকেই পলাতক দেখিয়ে তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়। গত ১১ ডিসেম্বর ওয়াজ উদ্দিনকে পলাতক ঘোষণা করে, তারপক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

মৃত্যুর ৯ দিন পর তাকে আদালতে হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির আদেশ আসে ট্রাইব্যুনাল থেকে। পরে তাকে হাজির করতে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এই মামলার অপর আসামি রিয়াজ উদ্দিন ফকির কারাগারে আছেন।

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ঋষিকেশ সাহা বলেন, আমরা প্রসিকিউশন গত ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত সংস্থা থেকে তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র গ্রহণ করি। ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রসিকিউশন থেকে ফরমাল চার্জ দাখিল করি। আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যু সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতে পারিনি। আদালত সঙ্গত কারণেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারেন। ট্রাইব্যুনাল চাচ্ছে আমরা আরও সচেতন হই। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

এ ঘটনার দায় কার জানতে চাইলে ঋষিকেশ সাহা বলেন, আমরা যেহেতু বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছি দায়টা আমাদের সবারই। কিন্তু আসামি পালিয়ে বেড়াচ্ছে এর দায় তার নিজের। এ ঘটনায় আমাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শহিদুল আলম ঝিনুক মৃত আসামির বিচার শুরুর দায় পুলিশকে দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যু সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশিত হয়। এর বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর বিভিন্ন থানা পুলিশ কেউ তার বিষয়ে কোন অনুকম্পা না পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৫ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (পুলিশ সুপার) একটি প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) পাই আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যু সম্পর্কে। যেটিতে তারা জানায়, ২০১৬ সালের ৭ মে ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এতে তার একটি মৃত্যুসনদও যুক্ত করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের পাঠানো প্রতিবেদনের আগে এ আসামি সম্পর্কে কোন পুলিশ বা কোন সংস্থা থেকে কোন প্রতিবেদন পাইনি।

মৃত্যুর এতোদিন পর তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলো তার দায় কার এমন প্রশ্নের উত্তরে রেজিস্ট্রার বলেন, এর দায় পুলিশের। আসামি যেহেতু ট্রাইব্যুনাল, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা গ্রেফতার করে না সুতরাং এর দায় এদের না।

ফুলবাড়ীয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রিফাত খান রাজীবের দেওয়া আসামির মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদনটিই ময়মনসিংহ পুলিশের বিশেষ শাখা বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে পাঠান। আসামির মৃত্যুর ঘটনা আট মাস পর দাখিল করলেও এর জন্য তাদের দায় আছে বলে মানতে নারাজ ওসি রিফাত খান রাজীব।

ঘটনার দায় পুলিশের ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলবাড়ীয়া থানার ওসি রিফাত খান রাজীব দ্য রিপোর্টকে বলেন, এই যুদ্ধাপরাধী যখন মারা গেছে তখন তারা তো আমাদের জানাইয়া দাফন করে নাই। ওরা গোপনে নিজেরা নিজেরা এনে দাফন করে ফেলছে। যখন এটা আমাদের নলেজে আসছে তখন আমরা এটা পাঠিয়েছি।

মৃত্যুর তথ্য পাঠাতে আট মাস বিলম্ব হয়েছে, এর মধ্যে অভিযোগ গঠনের বিচার শুরু হয়েছে। এই বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে ওসি রিফাত খান বলেন, কোর্টের কার্যক্রম তো আর আমরা জানি না। অভিযোগ গঠন হচ্ছে বা কি চলতেছে এই বিষয়গুলো তো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আমাদের নলেজে আসে না। কোর্টের কার্যক্রম তো তাদের ওয়েতে চলছে। আমরা আসলে ওয়াজউদ্দিনের পরিচয় নিশ্চিত হতে চেয়েছিলাম। বিষয়টা তো সেনসেটিভ, আমরা তো একশ’ পারসেন্ট কনফার্ম না হয়ে তো আর কোর্টকে অবহিত করতে পারি না।

মৃত্যুর তথ্য আগেই পুলিশ পেয়েছে এবং যাচাই করতেই এই বিলম্ব হয়েছে দাবি করে ওসি রিফাত খান বলেন, মারা যাওয়ার তথ্যটা কিছুদিন আগে আমরা পেয়েছি। আসামি ধরতে যাওয়ার কারণেই তো এটা বেরিয়ে আসে। যখন আমরা আসামি ধরতে গেছি তখন এলাকার লোকজন কেউ কেউ বলছে সে তো মারা গেছে। এই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা বিষয়টা ঘাটাঘাটি করেছি। কোথায় মারা গেছে, কোন হাসপাতালে মারা গেছে, কোথায় দাফন হয়েছে, এটা কি সেই লাশ কি না? যারা দেখছে ওরা কনফার্ম কি না যে এই লোক সেই লোক। পরে আমরা যোগাযোগ করে মৃত্যুর সার্টিফিকেট যোগাড় করে পাঠিয়েছি।


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম