ময়মনসিংহে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, দুর্ভোগে অর্ধলাখ পানিবন্দি মানুষ
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই দুই উপজেলার পর জেলার ফুলপুর উপজেলাতেও বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানির।
ধোবাউড়ায় গত কয়েকদিন একটানা পানি বাড়লেও বৃষ্টি না থাকায় বর্তমানে কিছু এলাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও পানি কমতে শুরু করেছে। একই অবস্থা হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলায়। পানিতে বহু মানুষ ঘরবন্দি থাকায় অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ধোবাউড়ায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি চলে। টানা বর্ষণে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে এবং পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় চল্লিশটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এরপর বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় সোমবার সকাল থেকে পানি স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তবে উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও চারটি ইউনিয়নে পানি অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে।
এদিকে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকা থেকে মালিঝি নদী হয়ে পানি হালুয়াঘাটে প্রবেশ করে। পানি ঢুকে প্লাবিত হয় উপজেলার কৈচাপুর, নড়াইল, জুগলী ও ধুরাইল ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক সড়ক, হালুয়াঘাট থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, খাদ্য গুদাম, ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনের অংশ, জয়িতা প্রাঙ্গণসহ পৌরশহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
হালুয়াঘাট সাখুয়াই গ্রামের আজিজুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন এই ইউনিয়নে পানি কম থাকলেও নিচু এলাকা হওয়ায় এখন পানি বাড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ঘরের ভেতরে পানি ডুকে পড়েছে। সাপ-বিচ্ছুর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছে না মানুষ। রান্না করে খাবার খাওয়ার মতোও অবস্থা নেই। খুব কষ্টে আছে সবাই।
ফুলপুর উপজেলার সিংহেশ্বর ইউনিয়নটি রবিবার থেকে প্লাবিত হয়েছে উল্লেখ করে আব্দুল হাই নামে এক কৃষক বলেন, ‘৫০ শতাংশ জমিতে সবজির চাষ করেছি। ইতোমধ্যে পুরো জমি প্লাবিত হয়েছে। নিচু এলাকায় থাকা বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন। যাদের ঘরবাড়ির ভেতরে এখনও পানি প্রবেশ করেনি, তারা অপেক্ষা করছেন। কারণ, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত পর্যন্ত পানি বাড়েনি।’
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ জানান, হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ভূবনকূড়া, জুবলী, কৈচাপুর, সদর, গাজীরভিটা ও পৌর এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে ধারা, ধূরাইল, নড়াইল, সাখুয়াই, আমতৈল ও বিলডোরাসহ মোট ৬টি ইউনিয়নে।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন জানান, এই উপজেলার মোট ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে গামারীতলা, ঘোঁষগাঁও ও দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নে পানি কমেছে। তবে এই উপজেলা সদর, গোয়াতলা, পোড়াকানদলিয়া ও বাগবেড়সহ ৪টি ইউনিয়নের বহু পরিবার এখনও পানিবন্দি রয়েছে।
ফুলপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম আরিফুল ইসলাম জানান, সিংহেশ্বর, ছনধরা ও সদর ইউনিয়ন নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি ভাটির দিকে নেমে আসায় বর্তমানে ফুলপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন জানান, বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবন্দিদের উদ্ধার কাজের পাশাপাশি চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এসব এলাকায় ইতিমধ্যে ৬৩ মেক্ট্রিক টন চাল, ৭ লাখ নগদ টাকা এবং দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।