ময়মনসিংহের চুরখাই এলাকায় চোরাই মালের ভাগাভাগির দ্বন্দে তানজিল হত্যা মামলার আসামি শরীফ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। অপরদিকে তারাকান্দা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে বাবুল মিয়া হত্যা ঘটনায় জড়িত সখিনা বেগম ও তার স্বামী (রাজমিস্ত্রি) শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করেছে তারাকান্দা থানা পুলিশ।
অন্যদিকে ডাকাতি প্রস্তুত কালে ৮ জন ডাকাতকে কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইভেটার ও অন্যান্য মালামালসহ গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক দল। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মাছূম আহাম্মদ ভূঞা এ তথ্য জানান। এ সময় তিনি বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর সদরের চুরখাই এলাকার মির্জা পার্কের পূর্ব পাশে মির্জা মঞ্জুরুল হকের পুকুরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। পরবর্তীতে লাশের নাম ঠিকানা সনাক্ত করে স্থানীয়ভাবে ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নরসিংদী শিবপুর এলাকা থেকে মোঃ শরীফ মিয়া নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীফ মিয়া ও তানজিল একসাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের চুরি করতো। সেই চোরাই মালের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ ছিল। এরই জেরে গত ৩ সেপ্টেম্বর আসামী শরীফসহ আরো একজন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নিহত তানজিলকে হত্যার উদ্দেশ্যে চুরখাই এলাকায় নিয়ে আসে। এরপর তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে একত্রে মাদক সেবন করার এক পর্যায়ে আসামী শরীফ মিয়ার পরিহিত কোমরের বেল্ট দিয়ে গলা পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে তানজিলকে হত্যা করে লাস মির্জা মঞ্জুরুল হকের পুকুরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আসামি শরীফকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে পরকীয়া ঘটনায় পুলিশ সুপার জানান, গত ২৪ আগস্ট পানের আরতের কর্মচারী নিহত বাবুল মিয়া তার পরক্রিয়া প্রেমিকা গার্মেন্টস কর্মী সখিনা বেগমের সাথে কাশিগঞ্জ বাজার হতে অজ্ঞাতনামা সিএনজিযোগে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মর্মে তারাকান্দা থানায় একটি জিডি হয়।
ওই জিডির প্রেক্ষিতে তারাকান্দা পুলিশের একটি আভিধানিক দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ৬ সেপ্টেম্বর গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পশ্চিম বাদাম নামক স্থানে অভিযান চালিয়ে বাবুল মিঞার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত আসামি সখিনা বেগম ও তার স্বামী মোঃ শাহজাহান মিয়াকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, সখিনা বেগমের সাথে নিহত বাবুল মিঞার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ বিষয়ে আসামি সখিনা বেগমের স্বামী মোঃ শাজাহান মিয়া জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিম বাবুল মিয়াকে হত্যা করার জন্য সখিনা বেগমকে চাপ প্রয়োগ করে এবং হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ আগস্ট রাতে আসামী সখিনা বেগম ঢাকা থেকে এসে তারাকান্দায় বিসকা ইউনিয়নের খিচা নামক স্থানে অবস্থান করে। অপরদিকে আসামি শাজাহান মিয়া নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা মহিষবেড় এলাকায় অবস্থান করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামি সখিনা বেগম নিহত বাবুল মিয়াকে ফোন করে ডেকে এনে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে সিএনজি যুগে রাতে রওনা হয়ে মহিষবেড় এলাকার জনৈক জয়নাল আবেদীন মাস্টারের পুকুরের দক্ষিণ পাশে নিয়ে শাহজাহান ও সখিনা গলা চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে এবং লাস গুম করার উদ্দেশ্যে সিদলা বিলের মাঝখানে সরকারি খাস পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে মাটির নিচে পুতে রেখে পালিয়ে যায়। দুইজন আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে পুলিশ সুপার মাছূম আহাম্মদ আরও জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে কোতোয়ালী মডেল থানার একটি চৌকষ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে কাভার্ড ভ্যান ও প্রাইভেটকার ও অন্যান্য মালামালসহ ৮ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামিরা আন্ত:জেলা ডাকাত ও চোর চক্রের সদস্য এবং তারা পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন সময় কাভার্ড ভ্যান ও গাড়িযোগে এসে গরুর খামারে গরু চুরিসহ বড় বড় দোকানের তালা কেটে মালামাল লুট করে নিতো। এছাড়াও আসামিদের বিরুদ্ধে জেলার বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম , ফাল্গুনী নন্দী, এম.এম মোহাইমেনুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শাহিনুল ইসলাম ফকির, কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দ, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ ফারুক হোসেন, তারাকান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়েরসহ জেলা পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।