মযমনসিংহের দুই উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি : খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট

মযমনসিংহে ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলার দুইদিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছেন। এর সাথে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুটি উপেজলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। গতকালও বন্যার অবনতির কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী। দুটি উপজেলার পানিবন্দি মানুষের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল এবং খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যপক সঙ্কট রয়েছে বলছেন স্থানীয়রা।

টানা ৩ দিন ধরে প্রবল বর্ষণ হয় জেলার সকল উপজেলায়। জেলার বিভিন্ন উপজেলা নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে হাজার হাজার মৎস্য খামার। পানির নিচে তলিয়ে গেছে একরের পর একর আমন ফসল। বিশেষ করে ভারত সীমান্তবর্তী হালুয়াঘাট, ধোবাউড়ায় বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শত শত গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন দুটি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ইতিমধ্যে বন্যা দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনা সদস্যরা স্পিডবোটে করে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে নারী ও শিশুসহ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে।

রবিবার সকালে হালুয়াঘাটের বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া। এসময় তিনি দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, এই অঞ্চলে ১৯৮১ সালের পর এটিই সবচে ভয়াবহ বন্যা। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে এবং ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতদের ও গবাদি পশু উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। এছাড়াও সার্বক্ষণিকভাবে প্রশাসনিক নজরদারি অব্যাহত আছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, রেডক্রিসেন্ট ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের সাথে সমন্বয় করে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ৪০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। নেতাই নদীর বাঁধ কিছু কিছু পয়েন্টে ভেঙে গেছে। ৭টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ পানিবন্দী পড়েছেন। প্রাথমিক ভাবে সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেন বলেন, হঠাৎ ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় বেশ কিছু গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে। এ সব এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তাদের জন্য সরকার দুটি উপজেলায় ১০ মে. টন করে ২০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল কিছু কিছু এলাকায় চাল বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করে আরও চালের বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *