নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশি পাটপণ্যের ওপর ভারতের আরোপিত উচ্চ হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, ভারতের মতো বন্ধুপ্রতিম দেশের কাছ থেকে এমন আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়।
মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে তামাক ও মদ ছাড়া সব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা দিচ্ছে। অথচ পাটপণ্য রপ্তানির উপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে। অনেক পণ্য রপ্তানির উপর সাড়ে ১২ শতাংশ হারে কাউন্টার ভেলিং শুল্ক নিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে তৈরি পণ্য ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।’
মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিআই)২০১৭ সালের নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘অ্যান্টি-ডাম্পিং বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারত সফরেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। ভারত বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছে। এজন্য বাংলাদেশ ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করতে আন্তরিক হবে।’
নতুন বছরের শুরুতে বাংলাদেশি পাটপণ্যে উচ্চ হারে অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে। ফলে ভারতে এখন পাটসুতা, চট ও বস্তা রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মেট্রিক টনে ১৯ থেকে ৩৫২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের পাটপণ্যের রপ্তানি আয় কমে যাবে এমন আশঙ্কাই করছেন সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যবসায়ীরা। কারণ বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে। ভারতের গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানিতে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে।
বাংলাদেশের পাট রপ্তানিতে অচিরেই অ্যান্টি-ডাম্পিং প্রথা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে আগামী ২৬ জানুয়ারি তিনি ভারত যাবেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে টাস্ক ফোর্স গঠনে কাজ করছে সরকার। বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে এই টাস্ক ফোর্স গঠন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তোফায়েল বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা কাঠামো (টিকফা) কার্যকর করতে হলে বাংলাদেশকে আরও সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। এখানে ট্রেড ইউনিয়েনের কথা বলা হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ট্রাম্প সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে যিনি আসছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ট্রেড ইউনিয়ন পছন্দ করেন না।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুন্যহাতে যুদ্ধবিদ্ধস্থ বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ২৫টি পণ্য বিশে^র ৬৮টি দেশে রপ্তানি করে আয় করতো মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ১৯৬টি দেশে ৭২৯টি পণ্য রপ্তানি করে আয় হচ্ছে ৩৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হবে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ ২০০৫-৬ সালে দেশের রপ্তানি ছিল মাত্র ১০.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে রপ্তানি লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আশা করছি রপ্তানি লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সব ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। ২০০৫-৬ অর্থ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার, এখন তা ১,৪৬৬ মার্কিন ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এখন ৭.১১ শতাংশ, অর্থ বছর শেষে তা ৭.৫ শতাংশ হবে। দারিদ্রের হার ২০০৬ সালে ছিল ৩৮.৪ শতাংশ, এখন তা ২৩.২ শতাংশে নেমে এসেছে এবং ২০০৬ সালে দেশে অতিদরিদ্র মানুষ ছিল ২৪.২ শতাংশ, এখন তা ১২.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ২০০৬ সালে স্বাক্ষরতার হার ছিল ৫২.৩ শতাংশ, আজ তা ৬৩.২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৬ সালে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৬৫.৪ বছর, এখন তা হয়েছে ৭১.৬৩ বছর। ২০০৬ সালে প্রতিহাজারে শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৪৮.৪ জন, এখন তা কমে এসেছে ২৯ জনে। ২০০৫-০৬ সালে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৫,২৪৫ মেগাওয়াট এখন তা ১৫,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সকল ক্ষেত্রে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ এখন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা বিব্রত হন, ক্ষতিগ্রস্থ হন এমন কোনো পদক্ষেপ সরকার নেবে না। ব্যবসায়ীদের পরামর্শ গ্রহণ করে সরকার কাজ করছে। চাহিদা মোতাবেক সরকার ব্যবসায়ীদের প্রায়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।’
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ডিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামরুল ইসলাম, ভাইস-প্রেসিডেন্ট হোসেইন এ সিকদার, সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম রেজাউল কবীরসহ পর্ষদের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।