শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪
আলোচিত সংবাদজেলা সংবাদ

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ইলিশের বাজারদর নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা ছিল ভোক্তাদের। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে এখনও চলছে আগের মতো দামে। এতে ফরিদপুরের ভোক্তারা ভরা মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত মূল্যে পাচ্ছেন না ইলিশ।

অন্তবর্তীকালীন সরকারের ঘোষণায় ইলিশ পাচারকারী চক্র ভয়ভীতিতে থাকলেও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভোক্তা সাধারণ।

ফরিদপুর শহরের হাজি শরীয়াতুল্লা মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ খুচরা মাছ ব্যবসায়ীর কাছে রয়েছে ছোট-বড় নানা রকমের ইলিশ। তবে দর আগের মতো চড়া। আর এতে ক্ষোভ দেখা যায় ইলিশ ক্রেতাদের মাঝে।

বর্তমান সরকারের হুঁশিয়ারিতে ভারতে ইলিশ পাচার কমে আসলেও এখনও ফরিদপুরের বাজারগুলোতে এর প্রভাব পড়েনি। জেলার অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রক সিন্ডিকেট এখনও ইলিশের চড়া মূল্য ধরে রেখেছে। কৃত্রিম উপায়ে মজুতের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ কমিয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এতে এখনও কাঙ্ক্ষিত মূল্যে মিলছে না ইলিশ।

ফরিদপুরের বাজারে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা রেজাউল করিম, রোকেয়া বেগম, সাইদা আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শুনেছি ইন্ডিয়ায় ইলিশ যাচ্ছে না। তবে কেন ইলিশের মৌসুমে এত দর হবে। বাজারে এসে দেখি দাম আগের মতোই আছে। বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবি, ইলিশ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে যেন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।’

বাজারের মাছ ব্যবসায়ী পরিমল কুমার দাস বলেন, ‘সাগর বা নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে কম, তাই বাজার দরও একটু বেশি। আর এই কারণে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহও তেমন নেই।’

জানা যায়, ফরিদপুরে ইলিশ মাছের বড় আড়তদার রয়েছেন সাত জন। এরা হলেন মনোজ রায়, মজিবুর রহমান, এম এম মুসা, মনিরুল ইসলাম মনা, হারান সরকার, শ্যামল দাস ও অজিত সরকার। এদের হাতেই নির্ধারিত হয় বাজারের ইলিশের দরদাম, অভিযোগ ক্রেতাদের।

তবে ফরিদপুরের ইলিশের আড়তদাররা জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। হাজি শরীয়াতুল্লা বাজারের রূপালী ফিশের স্বত্বাধিকারী হারান সরকার বলেন, ‘ইলিশের মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ফরিদপুর সদর উপজেলার বাজারগুলোতে ১০০ থেকে ১১০ মণ ইলিশ আনা হয়। তবে মৌসুম ব্যতীত এই হার ৪০ থেকে ৬০ মণের মধ্যে বা তারও কিছু কম-বেশি থাকে।’

ইলিশের এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘শুধু ফরিদপুর পৌর এলাকাতেই প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ মণ ইলিশের চাহিদা রয়েছে।’

বাজারের অতিরিক্ত দামের কারণ প্রসঙ্গে হারান সরকার বলেন, ‘আমরা যে দরে মাছ ক্রয় করি, তাতে ফরিদপুর পর্যন্ত আনার খরচ কেজিতে পড়ে যায় ৩০ থেকে ৪০ টাকা, তারপর আবার প্রতিকেজিতে বাজারের খাজনা দিতে হয় ৫০ টাকার বেশি । স্বাভাবিকভাবেই আমার যে দরে মাছ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করি তার থেকে একটু বেশি দরে খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হয় । এ ছাড়াও নদী বা সাগরের মাছ ধরার ওপর দর অনেকটা নির্ভর করে।’

শহরের শরীয়াতুল্লা বাজার, টেপাখেলা বাজার, হেলিপ্যাড মাছ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এসব বাজারে বরিশাল, ভোলা বা পটুয়াখালীর ইলিশ ১ কেজি সাইজের বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায় । আর কেজির ওপরে গেলে তার দর ১৯০০ থেকে ২২০০ টাকায় । তবে চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজারের ইলিশের দর কিছুটা কম। আর কেজিতে ৪ থেকে ৫টি ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রয় হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

জেলার প্রতিটি বাজারেই বিক্রেতারা একই দামে বিক্রি করছে। বাজারগুলোতে সিন্ডিকেটের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ লক্ষ করা গেছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *