রাশিয়ার বোমারু বিমান উড্ডয়ন নিশ্চিত হওয়ায় ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সারা দেশে নতুন করে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করেছে। ইউক্রেনের পাওয়ার গ্রিডে মস্কোর ‘ব্যাপক’ হামলা চালানোর একদিন পর এই সতর্কতা জারি করা হলো।
রাশিয়া সোমবার ইউক্রেনে কয়েকশ’ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে এবং দেশটির ইতোমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া বিদ্যুৎ গ্রিডে আঘাত হেনেছে। কর্মকর্তারা এ কথা বলেছেন।
রাশিয়ান কুরস্ক অঞ্চলে কিয়েভ তার নতুন অগ্রগতি দাবি করার পর রাশিয়ান এই হামলায় ব্যাপক এলাকা বিদ্যূতবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী মঙ্গলবার ভোরে পশ্চিম রাশিয়ার ‘এঙ্গেলস এয়ারফিল্ড থেকে বেশ কয়েকটি টিইউ-৯৫ এমএস যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন’ নিশ্চিত করে সারা দেশে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করেছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য ইউক্রেনের শহর ক্রাইভি রিগ-এ গতরাতের হামলায় আরও দুইজন নিহত হয়েছে। হামলায় বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সোমবার বলেছেন, কমপক্ষে ১২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১০৯টি ড্রোন দিয়ে মস্কোর চালানো এই হামলা ‘রাশিয়ার বৃহত্তম হামলাগুলোর মধ্যে একটি’।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর কমান্ডার মাইকোলা ওলেশচুকের বলেছেন, এর মধ্যে ১০২টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৯৯টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। তিনি এটিকে রাশিয়ার ‘সবচেয়ে বড়’ আক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন উভয়ই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে ‘আপত্তিকর’ বলে অভিহিত করেছেন এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এটিকে ‘কাপুরুষোচিত’ হামলা বলে উল্লেখ করেছেন।
জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আবারও রাশিয়া ইউক্রেনের লাইফলাইন বিদ্যুৎ গ্রিডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ইউক্রেনারগো হামলার পরে তার সিস্টেমকে স্থিতিশীল করার জন্য জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে ট্রেন চলাচলের সময়সূচী ব্যাহত হয়েছে।
রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দারা সোমবার ভোরে মেট্রো স্টেশনগুলোতে আশ্রয় নিতে ছুটে আসেন। এ সময় এএফপি’র সাংবাদিকরা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গর্জন শুনতে পেয়েছেন।
কিয়েভ মেট্রোতে আশ্রয় নেয়া ৩৪ বছর বয়সী আইনজীবী ইউলিয়া ভোলোশিনা বলেন,‘আমরা সর্বদা উদ্বিগ্ন। আমরা এখন প্রায় তিন বছর ধরে মানসিক চাপের মধ্যে আছি।’
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে এটা খুবই ভীতিকর ছিল। আপনার সামনে কি অপেক্ষা করছে আপনি তা জানেন না’।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণ করার পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর বারবার বড় আকারের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করেছে। যার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালনি অবকাঠামো সুবিধাগুলোও রয়েছে।
এক বিবৃতিতে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় নিশ্চিত করেছে, তারা বিদ্যুৎ অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে দাবি করেছে, অবকাঠামোগুলো ইউক্রেনের ‘সামরিক-উৎপাদন কমপ্লেক্স’কে সহায়তা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার ভোরে হামলায় অন্তত চারজন নিহত এবং সারাদেশে ২০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, পরের দিনের হামলায় আরও দু’জন নিহত হয়েছেন।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড বলেছে, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করা হয়েছিল। সম্ভবত একটি ড্রোন আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।
সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ডার জেনারেল ম্যাকিয়েজ ক্লিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সম্ভবত পোলিশ ভূখন্ডে একটি বস্তুর প্রবেশ নিয়ে কাজ করছি। বস্তুটি অন্তত তিনটি রেডিওলোকেশন স্টেশন দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জ্যাসেক গোরিসজেউস্কি বলেছেন, খুব সম্ভবত এটি রাশিয়ান সামরিক বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত ইরানের শাহেদ-টাইপ ড্রোন হতে পারে।
তিনি এএফপি’কে বলেছেন, ‘তবে এটি যাচাই করতে হবে’। ড্রোনটি ইতোমধ্যে পোলিশ অঞ্চল ছেড়ে গেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ভবিষ্যতে কিয়েভকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নামানোর জন্য ইউরোপীয় বিমান বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।