ক্রীড়া ডেস্ক : নিউজিল্যান্ড সফর শুরুর আগে বাংলাদেশের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে ঠিক যেন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। না ব্যাটিং, না কিপিং। সমালোচকদের কেউ কেউ মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন। সমালোচকদের জবাব দেওয়ার জন্য যুতসই কোন উত্তরও অবশ্য মুশফিকের ছিল না!
কারণ বিপিএল টুর্নামেন্টে বরিশাল বুলসের অধিনায়ক হিসাবে দলে তেমন কোন অবদান রাখতে পারেননি। বিপিএলের ৮ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৩৬ রান এসেছিল ঢাকা ডায়নামাইটের বিরুদ্ধে। গ্লাভস হাতেও ছিলেন অনুজ্জ্বল। ঘরের মাঠে এমন হতাশাজনক নৈপুণ্যের কারণে নিউজিল্যান্ডের মাঠে তার ব্যাট কতটা কথা বলতে পারে তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও ছিল। তবে সে সংশয়টা কিছুটা দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড একাদশের বিরুদ্ধে ওয়ানডের প্রস্তুতি ম্যাচে। ওই ম্যাচে ৪৫ রানের পাশাপাশি গ্লাভস হাতে একটি ক্যাচও ধরেন তিনি।
নিউজিল্যান্ড সফরে একটি ফ্রেশ শুরুর ইঙ্গিতই হয়ত দিচ্ছিলেন মুশফিক। কিন্তু বিধি বাম! তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ক্রাইস্টচার্চে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির শিকার হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন মুশফিক। মাঠ ছাড়ার আগে ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ওই ম্যাচে আর মাঠে নামা হয়নি তার। শুধু তাই নয়, ওয়ানডে সিরিজের বাকি দুই ম্যাচের পাশাপাশি টি২০ সিরিজেও ইনজুরির কারণে কাটা পড়েন তিনি। ইনজুরির কারণে প্রথম টেস্টে মাঠে নামা নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। সে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে মাঠে ফিরেছেন মুশফিক। ইনজুরি থেকে ফিরেই যেন নিজের ছন্দ ফিরে পেলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক। মুখে নয়, ব্যাটেই দিলেন সব সমালোচনার জবাব।
দ্বিতীয় দিনের শুরুতে মমিনুল হক আউট হওয়ার পর মাঠে নামেন মুশফিক। জুটিবদ্ধ হন সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে। আর এ জুটির কাছে নিউজিল্যান্ড দলের কোন বোলারই পাত্তা পায়নি। একেবারে সাধারণ মানে নামিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড বোলারদের। নিজেদের মাঠে এমন নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনা অনেক দিনই হয়ত মনে রাখবেন ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদিরা।
মুশফিক যখন মাঠ ছাড়েন তখন তার নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১৫৯ রান। বোল্টের বলে উইকেটকিপার বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে ধরা পড়ার আগে খেলেন এ অনবদ্য ইনিংস। এ ইনিংসে তিনি ২৩টি চারের পাশপাশি ১টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন।
যতক্ষণ মাঠে ছিলেন ততক্ষণ দ্যুতি ছড়িয়েছে তার ব্যাট। লাঞ্চের আগেই তুলে নেন অর্ধশতক। এ রান তুলতে খেলেন ১০২ বল। এতে ছিল ৭টি চারের মার। এ অর্ধশতকের মাধ্যমে ৫ম উইকেট জুটিতে সাকিবের সঙ্গে ১৭২ বলে গড়েন ১০০ রানের জুটি। ওই সময় সাকিবের রান ছিল ৫২। এ জুটি যখন লাঞ্চে যায় তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২৬৯ রান। লাঞ্চ বিরতির সময় সাকিবের রান ছিল ৬৬ আর মুশফিকের ৫৩।
লাঞ্চ বিরতির পর সাকিব ও মুশফিক জুটি সমানতালে ব্যাট চালিয়ে যান। নতুন বলেও নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলারদের অসহায়ত্ব মোটেও ঘুচেনি।
এ জুটি ২৪২ বলে যখন ১৫০ রান তুলে নেয় তখন মুশফিকের রান ছিল ৭৮ আর সাকিবের ৭৩। এ সময়ে সাকিব ও মুশফিকের মধ্যে কে আগে শতকের ঘর পৌঁছাবে-তা নিয়ে কিছুটা প্রতিযোগিতাও হয়তো ছিল। তবে মুশফিকের আগে সাকিবই সে লড়াইয়ে জেতেন। ১৫০ বলে সাকিব তুলে নেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সাকিবের পর মুশফিকুর রহিমও তার চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে ৯০ ঘরের কোটায় পৌঁছার পর কিছুটা সতর্কই ছিলেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত ১৭৯ বল খেলে ১৭টি চারের মাধ্যমে মুশফিক তার শতক পূর্ণ করেন। সেই ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর কিংসটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। এরপর ১১টি ম্যাচে সেঞ্চুরির দেখা মিলেনি।
সেঞ্চুরির পর কিছুটা হাত খুলেই খেলেন মুশফিক। শতকের পর পরবর্তী ৫০ রান করতে বল খেলেন ৬১টি। দেড়শ রান করতে মুশফিক খরচ করেন ২৪০ বল এবং এতে ২২টি চার এবং একটি ছক্কার মারও ছিল।
মুশফিক যখন ১৫৯ রানে কাটা পড়ে সাজঘরে ফিরেন সে সময় সাকিবের সঙ্গে গড়েন যে কোন উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের রেকর্ড। অন্যদিকে এটি টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরির জুটি। প্রথমটি ৩১২ রানের। খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল যেকোনো উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ এই রানের জুটিটি গড়েছিলেন। আর এ রেকর্ড জুটিতে ৭ উইকেটে ৫৪২ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।