শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ব্যাপারে তথ্যদাতাকে পুরস্কৃত করা হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার বঙ্গবন্ধুর পলাকত ও দন্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন হত্যাকারীর অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্যদাতাকে পুরস্কৃত করবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সকল প্রবাসী বাংলাদেশীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে যদি বঙ্গবন্ধুর এই তিন হত্যাকারী সম্পর্কে আপনাদের কাছে কোন ধরনের তথ্য থাকে, তবে আমাদের তা জানান। আপনাদের তথ্য সঠিক হলে, অবশ্যই আমরা আপনাদের পুরস্কৃত করব।’
আজ সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বঙ্গবন্ধু কর্নারে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
সরকার ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর দুই দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামী রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীর অবস্থান জানতে পেরেছে। এরা যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় অবস্থান করছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অপর তিন হত্যাকারী খন্দকার আব্দুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম ও মোসলেহ্উদ্দিন কোথায় আছে, সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।
ওই দুই হত্যাকারীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় তাদের বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।
ড. মোমেন বলেন, ‘কিন্তু অপর তিন জন দন্ডাদেশপ্রাপ্ত খুনী- যাদের অবস্থান সম্পর্কে আমরা কিছু জানতে পারিনি, তারা ভিন্ন ভিন্ন পাসপোর্ট নিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পলাতক দন্ডাদেশপ্রাপ্ত এই আসামীদের পাকড়াও করার অভিযানের অংশ হিসেবে এর আগে সকল বিদেশী মিশনগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সন্দেহজনক স্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশী মিশনগুলোতেও সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরী সম্পর্কে ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি তাদের হস্তান্তরে কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।
তিনি এই খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টার পাশাপাশি একটি স্বাক্ষর-অভিযান শুরু করার জন্যও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে- রাশেদ চৌধুরী মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল তথ্য দেয়ায়, এই দন্ডাদেশপ্রাপ্ত হত্যাকারীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। কারণ মার্কিন কর্তৃপক্ষ এখন তার অভিবাসন মামলাটি সেখানে পর্যলোচনা করছে।
পলাতক হত্যাকারীদের বিদেশী প্রতিবেশীরা যেন জানতে পারে যে- তাদের পাশে একজন খুনী বাস করছে, সে জন্য তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে মোমেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ বাড়াতে কানাডার বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি অনুরোধ জানান।
তিনি তাদেরকে জানাতে বলেন যে- কানাডা খুনীদের আশ্রয়স্থল হতে পারে না।
শুক্রবার ড. মোমেন বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, প্রাথমিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঢাকা ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত লুকিয়ে থাকা হত্যাকারীদের সণাক্ত করতে- হত্যাকারীরা যে সকল দেশে লুকিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেখানকার বাংলাদেশী মিশনগুলো সক্রিয় করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে বাংলাদেশী মিশনগুলোকে, বিশেষত যে সব দেশে এই পলাতক দন্ডাদেশপ্রাপ্ত হত্যাকারীরা লুকিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে- তাদেরকে সেই দেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। যাতে করে তাদের খুঁজে বের করা যায়।’
একটি সুরক্ষিত বিচার প্রক্রিয়ার পর মোট ১২ জন বরখাস্তকৃত সামরিক কর্মকর্তাকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয়া হয়। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ছয় জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হয় এবং একজন বিদেশের মাটিতেই স্বাভাবিকভাবে মারা যায়।
হত্যাকারীদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার পর থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত থেকে তিন জন দন্ডাদেশপ্রাপ্ত হত্যাকারীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
এর আগে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছিল যে- তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হত্যাকারীদের কয়েকজন সম্ভবত এক দেশ থেকে আরেক দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ ইন্টারপোল তাদের পাকড়াও করতে ‘রেড নোটিশ’ জারি করেছে।
পুলিশ সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, এই হত্যাকান্ডের অন্যতম হোতা বরখাস্তকৃত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুর রশিদ একটি আফ্রিকান দেশে আশ্রয় নিয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আগের প্রতিবেদনগুলোতে ধারণা করা হয় যে- অন্যান্য দন্ডাদেশপ্রাপ্ত হত্যাকারীরা পাকিস্তান, লিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, স্পেন ও জার্মানীতে লুকিয়ে থাকতে পারে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে, সরকার ১৯৭৫ সালের হত্যাকান্ডে দন্ডাদেশপ্রাপ্ত হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে পুলিশের অতিরিক্ত মহা-পরিচালক পদমর্যাদার পুলিশের বিশেষ বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে একটি বিশেষ স্কোয়াড গঠন করে।
এ সময় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র সচিব মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে তিনটি চারাগাছ রোপন করেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *