ফ্যাসিবাদের পতন হলেও নানান রূপে-নানান পরিচয়ে ফ্যাসিবাদ ফিরে ফিরে আসছে আর শান্তিকামী-নিরীহ মানুষের উপর প্রতিশোধের থাবা বসাচ্ছে। যখন লিখছি-তখন হাত কাঁপছে শোকে-ক্ষোভে। হাত কাঁপছে বরিশালের বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলীর একজন পিতা-মাতাহীন পাগল তোফাজ্জলের প্রতি গভীর সমবেদনায়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তোফাজ্জলকে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জালাল আহমেদ। একই দিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে একইদিন প্রায় একই কায়দায় ‘মব জাস্টিস’ এর মাধ্যমে পিটিয়ে মানুষ হত্যার যে রীতি তা কোনভাবেই ফ্যাসিবাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবার সুযোগ নাই। অত্যন্ত আতংকের বিষয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের এসব ঘটনায় শিক্ষার্থীরা জড়িত মর্মে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরচে’ বড় আশংকার বিষয় উভয় হত্যাকান্ডেই ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ধারীর সংশ্লিষ্টতার খবর শুনা যাচ্ছে! যা মোটেই সুখকর কোন বিষয় নয়। “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবিবকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে” মর্মে প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। একই ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সদস্য পরিচয়ে চারজন শিক্ষার্থীর কথা এসেছে তারা কেউ ছাত্রদলের নেতা-কর্মী নয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কোন কমিটিই নাই। বিষয়টি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিবৃতি দিয়ে স্পষ্ট করা হয়েছে। কেউ কোন অপকর্ম করে ছাত্রদলের নামে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা নতুন কিছু নয়। নিজেদের কৃত অপকর্ম অন্যের নামে চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা ফ্যাসিবাদীদের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। এটা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ গোপালগঞ্জে ফ্যাসিস্ট লীগের নেতা-কর্মী ও খুনী হাসিনার দোসররা মাইকিং করে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা কর্মীদের উপর হামলা করে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ আরও অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। একজন শান্তিকামী মানুষ হিসেবে এসব হামলা ও হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।
বিচার বহির্ভূত এসব হত্যাকান্ডের শিকার মানুষগুলো এদেশের কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় নিরীহ মানুষের প্রতীক আর তার বিপরীতে জালাল -লাবিব ও গোপালগঞ্জ ফ্যাসিস্ট লীগের নেতা-কর্মীরা হাসিনার সৃষ্ট পতীত ফ্যাসিবাদের রেখে যাওয়া বংশধর, বিগত ২০০৯ সাল হতে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় সাড়ে চৌদ্দ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এবং ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার রেখে যাওয়া উত্তরসূরী।
বিগত প্রায় সাড়ে চৌদ্দ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন নানা ভাবে সমাজে ক্ষত সৃষ্টি করে গিয়েছে। তাদের অত্যাচারে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে ব্যক্তি-সমাজ ও রাষ্ট্র। ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে ৫ আগস্ট ২০২৪ ফ্যাসিবাদের মাস্টারমাইন্ড পদত্যাগপর মামুর বাড়িতে পলায়নের পরও তার দোসররা থেমে নেই। ’২৪ এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে-গণহত্যা চালিয়ে নিজ দেশের মানুষের উপর যে মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে খুনী হাসিনার পেটুয়া বাহিনী, আধুনিক সভ্য যুগে তো নয়ই-পৃথিবীর ইতিহাসের অন্ধকার মধ্যযুগেও এমন গণহত্যার নজির পাওয়া যাবে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার গণহত্যার শিকার হয়ে হাজারেরও অধিক মানুষ শহীদ হয়েছেন-যাদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থী-শিশু -বৃদ্ধ-পথচারি-রিকশাচালক-শ্রমিক। ৫ আগস্ট গণহত্যাকারী হাসিনার পতন হয়েছে ঠিকই কিন্তু তার দোসররা কি থেমে গেছে? যাদের হাত শহীদের রক্তে লাল হয়েছে, তারা কি থেমে যায়? নাকি সমাজের আনাচে কানাচে ঘাপটি মেরে বসে আছে দেশের মানুষের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য?
না। অতীত ইতিহাস বলে হাসিনার শকুনরা, ফ্যাসিবাদের দোসররা অত সহজে থামবে না। ফ্যাসিস্ট খুনী হাসিনার পতনোত্তর সময়ে তার রেখে যাওয়া দোসররা এখনও সুযোগ পেলেই যে কোন সময় হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠবে, সুযোগ পেলেই প্রতিশোধের ছোবল দিবে দেশের সাধারণ মানুষের উপর। নানান বেশে-নানান পরিচয়ে হাসিনার দোসররা ফিরে আসবে আর শান্তিকামী-নিরীহ মানুষের উপর থাবা বসাবে। তার সর্বশেষ উদাহরণ হল নিরীহ তোফাজ্জলের হত্যাকান্ড। লোকমুখে শোনা যায় ছাত্রলীগের জালাল নাকি এখন এফ এইচ হলের সমন্বয়ক!! জালালরা পরিচয় বদলায়-চরিত্র বদলায় না। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের চিরাচরিত নিয়মে জালালরা ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্ট নাম পরিবর্তন করে “সমন্বয়ক” হয়ে গেছে কিন্ত রুপ বদলায়নি, চরিত্রও বদলায়নি।
তাই ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের কবল থেকে দেশকে-দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল করতে হলে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের শকুনরা যেন রূপ বদলিয়ে দেশ ও দশের উপর প্রতিশোধের থাবা বসাতে না পারে, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে না পারে সে বিষয়ে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মত জায়গায় পিটিয়ে মানুষ হত্যার ন্যায় জঘন্য কর্মকান্ডসহ সকল প্রকার অপরাধমূল কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। সকল প্রকার অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কাউকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কোন দায়িত্ব প্রদানের পূর্বে, কোন ক্যাম্পাসে বা হলে সমন্বয়কের দায়িত্ব প্রদানের পূর্বে তার চরিত্র, পরিচয় ও অতীত কর্মকান্ড বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দায়িত্ব প্রদান করতে বিনীত আহবান রইল।
কৃষিবিদ মো: আতিকুর রহমান
শিক্ষার্থী মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, বাকৃবি
এবং
আহবায়ক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল