সংবাদ শিরোনাম

 

ফেনী জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। একইসঙ্গে ছাগলনাইয়া ও দাগনভূঞা উপজেলার আরও একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে তথ্যগুলো জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের আকুতি, এত পানি তারা জীবনে দেখেননি।
উপজেলা প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজানের পানিতে প্রবল বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় পানির তীব্র স্রোতের কারণে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন জনপদের লক্ষাধিক মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড়মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে মানুষ। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে গত সোমবার দুপুর থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বের ১৭টি ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এতে তিন উপজেলার রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, নদীর পানি বিপৎসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতো পানি আগে কখনো দেখা যায়নি। মানুষকে উদ্ধারেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। আমরা অসহায়বোধ করছি। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এখনো পানি বাড়ছে।

ফেনী আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, গত তিনদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলায় আজ সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরশুরামের সলিয়া এলাকার বাসিন্দা হাবিব স্বপন বলেন, বন্যা পরিস্থিতি এমন হবে কেউ বুঝতে পারেনি। সোমবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। এতে অনেক বেশি ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, ভয়াবহ বন্যায় পরশুরাম পৌরসভা ও উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। এ পর্যন্ত প্রায় কয়েকশত লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন লোক নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৫০ টন চাল মজুদ রয়েছে।

ফুলগাজীর উত্তর দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম রাজু বলেন, গতরাত ৩টার দিকে বুক সমান পানি ডিঙ্গিয়ে পরিবারসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। চারদিকে পানি থইথই। ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র কোনো কিছুই বের করতে পারিনি।
কিসমত ঘনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, ঘরের ছাদ পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষদের উদ্ধারে দু’একটি নৌকা কাজ করলেও পানির স্রোতের কারণে সম্ভব হচ্ছে না।

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ভূঁইয়া জানান, ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। গতকাল রাত ১০টা থেকে ফায়ার সার্ভিস এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ডিঙি নৌকা দিয়ে এ পর্যন্ত কয়েকশত লোককে উদ্ধার করেছে। সেনাবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায় উদ্ধার কাজ শুরু হচ্ছে। একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ১৮ টন চাল মজুদ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের স্পিডবোট নিয়ে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু করেছে। সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছেন।


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম