বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
আলোচিত সংবাদকৃষি ও পরিবেশনেত্রকোনাময়মনসিংহ

নেত্রকোনায় ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়

নেত্রকোনায় গত বছরের মতো এবারও সরকারি খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গত ৭ মে থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও জেলায় এখনো কেনা শুরু হয়নি। অ্যাপসে আবেদনে বিভিন্ন ঝামেলার কারণে কৃষকেরা স্থানীয় বাজারেই কম দামে ধান বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

গত বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ। তবে খাদ্য বিভাগের দাবি, এবার তারা আশা করছে, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল কিনতে পারবে তারা।

স্থানীয় কৃষক ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১০ উপজেলার ১৪টি খাদ্যগুদামে এ বছর ২০ হাজার ৯৭৩ মেট্রিক টন ধান, ৪৭ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল ও তিন হাজার ৮০২ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের কথা। ৭ মে থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ আগস্ট এ অভিযান শেষ হওয়ার কথা। প্রতি কেজি ধানের দাম ৩২ টাকা ও সেদ্ধ চালের দাম ৪৫ টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু রোববার পর্যন্ত শুধু কলমাকান্দা উপজেলায় মাত্র ৫ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর অন্য উপজেলাগুলোতে এক ছটাক ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি ও কলমাকান্দার আংশিক এলাকা হাওরাঞ্চল। এসব এলাকায় ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর জমির ধান প্রায় তিন সপ্তাহ আগেই মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়। এ ছাড়া সব মিলিয়ে এবার ১০ উপজেলায় এক লাখ ৮৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা বোরো ধান দুদিন আগে শত ভাগ কাটা হয়ে গেছে। প্রায় ১২ লাখ ২৮ হাজার ২২৩ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু খাদ্যগুদামে কৃষকেরা ধান না দিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

হাওরাঞ্চলের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধানই তাদের একমাত্র ফসল। এ ফসলের ওপর ভিত্তি করে তাদের সারা বছরের সংসার খরচ, সন্তানদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও আচার-অনুষ্ঠান। হাওরে যখন ধান কাটা শেষ হয়, এক মাস পর সরকারিভাবে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হয়। এতে প্রকৃত কৃষকের হাতে তেমন ধান থাকে না। মাঠে ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকেরা ঋণ মেটাতে স্থানীয় হাটবাজার ও ফড়িয়াদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি শুরু করে দেন। আবার অনেকেই নানা ঝামেলার কারণে গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না। সরকারি নির্দেশ মেনে কৃষকের ধান বিক্রি করতে গেলে অ্যাপসে নিবন্ধন, লটারি, আর্দ্রতা যাচাই, পরিবহন খরচসহ নানা ঝামেলা পোহাতে হয়।

খালিয়াজুরির সদরের কৃষক মহসিন মিয়া বলেন, দুই বছর আগে তিনি গুদামে ধান দিতে যান। কিন্তু সেখানে তাকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। অ্যাপস, লটারির ঝামেলা ছাড়াও হাওর এলাকায় পথঘাট না থাকায় কষ্ট করে গুদামে ধান আনা, আর্দ্রতা যাচাইয়ের নামে হয়রানি, লেবার খরচের নামে বস্তাপ্রতি টাকা দেওয়া, কয়েক দিন ঘুরে চেক সংগ্রহ নানান হয়রানির কারণে সরকারের কাছে ধান বিক্রির ইচ্ছা থাকে না কৃষকদের। তা থেকে রেহাই পেতে তারা স্থানীয় বাজারেই কম দামে ধান বেচে দেন।

এছাড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান মাড়াই হওয়ার পর তাদের কাছ থেকে ধান কিনে আনছেন। কিছু টাকা কম হলেও কৃষকেরা এতে খুশি।

কৃষকদের অভিযোগ, ধান সংগ্রহে খাদ্য বিভাগের আগ্রহ কম। কারণ, খাদ্য বিভাগ তাদের খেয়াল খুশিমতো ধান সংগ্রহের কাজটি করে থাকে। সংগ্রহের আগে প্রচার প্রচারণার কথা থাকলেও এ ব্যাপারে তারা উদাসীন। অনেক কৃষকই অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন বিষয়টি শুনে জটিল মনে করে গুদামে ধান দিতে চান না। এ বিষয়ে খাদ্য বিভাগ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় না।

খালিয়াজুরির পুরানহাটি গ্রামের শফিকুল ইসলাম পায়রার হাওরে প্রায় ছয় একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। বীজ সংগ্রহ থেকে শুরু করে আবাদ, ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানো ধরে তার ব্যয় হয় প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। বিনিময়ে তিনি ধান পেয়েছেন প্রায় ৫০০ মণ। এ ফলনে খুশি হলেও তাকে দুই সপ্তাহ আগে ৮৫০ টাকা মণ দরে শুকনো ধান বিক্রি করতে হয়েছে। তখন সরকারিভাবে ধান কেনা শুরু হয়নি। এলাকায় ধানের বর্তমান দাম মণপ্রতি ৮৭০ থেকে ৯০০ টাকা।

তিনি বলেন, এখন কৃষকের কাছে তেমন ধান নেই। কারণ, প্রান্তিক কৃষকেরা মহাজনসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। ঋণ পরিশোধের জন্য ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। সরকারিভাবে ধান ক্রয় দেরি হওয়াসহ গুদামে ধান দিতে গেলে নানা ঝামেলা হয়। তাই আমরা কম দামে আগেই ধান বিক্রি করে দিয়েছি।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচ আর খান পাঠান বলেন, নেত্রকোনায় এখন ভেজা ধান বাজারে প্রায় ৯০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ধান কিনে চাল করতে সর্বনিম্ন ৪৫ টাকা কেজি খরচ পড়ে। সুতরাং সরকারকে চাল দিতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে মিলারদের। এ নিয়ে চুক্তিবদ্ধ মিলাররা দুশ্চিন্তায় আছেন।

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোয়েতাছেমুর রহমান বলেন, বাইরে দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা এখন গুদামে ধান দিতে চান না। তবে যেহেতু অভিযান শুরু হয়েছে, সুতরাং আশা করা যাচ্ছে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *