নিজস্ব প্রতিবেদক : “কথা দিয়ে কথা রাখবেন। আমাদের ধোঁকাবাজি শেখাবেন না। আমাদের পরিবারের আর্থিক দিকগুলো বিবেচনা করবেন। আর কতদিন পরিবারের বোঝা হয়ে থাকবো?” জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথাগুলো লিখে নিজের ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তির অপেক্ষায় থাকা এক ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স ভর্তির কার্যক্রম পিছিয়েছে নির্ধারিত সময় থেকে অনেক বেশি। অথচ গত ১ ডিসেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। ভুক্তভোগী মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৬ সালের নভেম্বরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয় নোটিস দিয়ে বলেছিলো, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স শেষ পর্বের ভর্তি কার্যক্রম ২০১৬ সালের নভেম্বরে শেষ করে ১ ডিসেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ক্লাস শুরু তো দূরের কথা ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ কিংবা আর কোনো নোটিসও প্রকাশ করেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
সকালে ক্লাস ও বিকেলে পরীক্ষা গ্রহণের মত কর্মসূচি নিয়ে গত বছরের ২২ জানুয়ারি ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ এর ঘোষণা দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। লক্ষ্য, ২০১৮ সালের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোকে সেশনজট মুক্ত করা।
সেশনজট কমাতে ঘোষিত ক্রাশ প্রোগ্রামের সময়সূচি অনুযায়ী অনার্স ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা (২০১৪) হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের মধ্যে। এপ্রিল-জুলাইয়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, কিন্তু এগুলোর কোনোটাই রক্ষা করতে পারেনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গত বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর ফলাফল প্রকাশ করলেও নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে আবার সংশোধনী ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
আর ক্রাশ প্রোগ্রাম অনুযায়ী, মাস্টার্স শেষ পর্ব (২০১৪-১৫ সেশন) ভর্তি কার্যক্রম ২০১৬ সালের অক্টোবরে শেষ হয়ে নভেম্বরে ক্লাস শুরুর কথা ছিল। আর গত বছর মাস্টার্স শেষ পর্ব (২০১৩-১৪ সেশন) শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছিল ২৪ জানুয়ারি।
প্রতিবছর সেশন জট কমানোর কথা থাকলেও মাস্টার্স শেষ পর্ব (২০১৪-১৫) সেশনেও দেখা যায় জট বেড়েছে।
২০০৮ সালে এসএসসি এবং ২০১০ সালে এইচএসসি পাশ করে এখনও মাস্টার্স ভর্তি তো দূরে থাক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের (পরীক্ষা-২০১৪) সাময়িক সনদপত্রও নিতে পারেনি শিক্ষার্থীরা।
অথচ চার বছরের অনার্স এবং এক বছরের মাস্টার্স মিলে মোট পাঁচ বছরের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করেছে একই ব্যাচে পাবলিক কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা।
মাস্টার্স বিলম্ব হওয়ার কারণে ও সাময়িক সনদ না পাওয়ায় চাকরি জীবনের পরিকল্পনাও নিতে পারছেন না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা।
দ্রুত মাস্টার্স শেষ পর্ব ২০১৪-১৫ সেশনের ভর্তির মেধা তালিকা প্রকাশ এবং ২০১৪ সালের অনার্স পরীক্ষার সাময়িক সনদপত্র দ্রুত কলেজে পাঠানোর দাবি শিক্ষার্থীদের।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মোবাইল নম্বরে বুধবার সকালে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মাস্টার্স পরীক্ষা হতে পারে।