রবিবার, নভেম্বর ১০, ২০২৪
রবিবার, নভেম্বর ১০, ২০২৪
আলোচিত সংবাদনেত্রকোনাব্রেকিং নিউজময়মনসিংহ

দুর্গাপুরে পাহাড়ী ঢলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচ ইউনিয়নে পাহাড়ী ঢল নেমে নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০-৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, চারদিক পানিতে থইথই করছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তাও রয়েছে পানির নিচে। ঘরের চার দিকেই পানি সে পানি, চারদিকে বাড়ছে দুর্ভোগ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চাল গুলো প্লাবিত হয়েছে। সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে গতকাল আজ রবিবার সকাল ৯টা নাগাদ ১৫ ঘণ্টায় ৫০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বর্তমানে নদীটির পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটিতে গড়ে ঘণ্টায় সাড়ে তিন সেন্টিমিটার পানি বেড়ে চলছে।

রোববার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সোমেশ্বরী ও পার্শ^বর্তী নেতাই নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের জাগিরপাড়া, বন্দউষান, মুন্সিপাড়া, আটলা, পূর্বনন্দেরছটি, হাতিমারাকান্দা, ভাদুয়া, নাওধারা, দক্ষিন জাগিরপাড়া, অপরদিকে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বিলকাঁকড়াকান্দা, দৌলতপুর, পলাশগড়া, বংশীপাড়া, গাইমারা, কাকৈরগড়া ইউনিয়নের, গোদারিয়া, বিলাশপুর, লক্ষীপুর, রামবাড়ি, দুর্গাশ্রম এবং চণ্ডিগড় ইউনিয়নের সাতাশি, চারিখাল, নীলাখালী, ফুলপুর এবং বাকলজোড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম সহ প্রায় ৪৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। রাস্তা, মাঠ-ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। স্কুল, মাদ্রাসা, ঘর-বাড়ির চারপাশেই পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। বিভিন্ন পুকুর তলিয়ে ভেসেগেছে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন মানুষের। অপরদিকে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট।

গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের ব্যবসায়ী আহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের চলাচলের রাস্তায় কোমর পানি, যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে ভয় হচ্ছে পরবর্তিতে পরিবার পরিজন নিয়ে কোথায় যাবো। চণ্ডিগড় ইউনিয়নের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ফকির বলেন, আমাদের গ্রামে অনেক মানুষ পানি বন্দী, হাট-বাজারেও যেতে পারছেন না।

বাকলজোড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবুল কাশেম বলেন, ফসলী জমি ৮০% পানির নিচে এখন। তাছাড়াও চলাচলের প্রায় সব রাস্তায় পানির নিচে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে ঘরে পানি ডুকে যাবে মনে হচ্ছে।

উপজেলা মৎস কর্মকর্তা শিরিন আক্তার বলেন, পাহাড়ী ঢলে ৫টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমান প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।

উপজেলা কৃষি অফিসার নীপা বিশ^াস বলেন, আমনধান. মাশকলাই ও শীতকালীন সব্জির প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমি নিমজ্জিত রয়েছে এরমধ্যে ৬হাজার ২শহ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দু‘একদিনের মধ্যে যদি পানি নেমে য়ায় তাহলে ক্ষতির পরিমান অনেকটাই কমে আসবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিম্নাঞ্চলের অনেক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। আমাদের পক্ষ থেকে গতকাল কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়ন গুলোতে ত্রান বিতরণ অব্যহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এমন খবর সব জায়গা থেকেই আসছে। ত্রান বিতরণ ও আশ্রয় কেন্দ্র খোলা দুপুরে জরুরি মিটিং ডেকেছি, সকল ক্ষেত্রেই উপজেলা প্রশাসন সজাক রয়েছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলের পানিতে জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে চলেছে। গতকাল বিকেল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টা উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। রাতে উজানে বৃষ্টি হওয়ার কারনে সোমেশ্বরী, কংস ও নেতাই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *