সুমন রায়, দুর্গাপুর ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম : আগামীকাল ৩১ জানুয়ারী টংক ও জমিদার প্রথা উচ্ছেদ আন্দোলনের অন্যতম মহীয়সী নারী নেত্রী ও কমরেড মনিসিংহের সহযোদ্ধা শহীদ রাশিমণি‘র ৭১ তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে হাজংমাতা রাশিমণি মেলা উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামের রাশিমণি স্মৃতি স্তম্ভ প্রাঙ্গণে আজ ৩১ জানুয়ারী থেকে ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৭ দিন ব্যাপী মেলার উদ্বোধন করবেন নারী নেত্রী কুমুদিনী হাজং। আদিবাসী লেখক ও গবেষক সুজন হাজং এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আদিবাসী লেখক ও গবেষক মতিলাল হাজং এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ছবি বিশ^াস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, পৌর মেয়র হাজী মাওলানা আব্দুস সালাম, সাবেক মেয়র কামাল পাশা, শ.ম জয়নাল আবেদীন, আদিবাসী লেখক ও গবেষক স্বপন হাজং প্রমুখ।
১৯৪৬ খ্রীঃ ৩১শে জানুয়ারী দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে একজন মেজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ইষ্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহীনির সশন্ত্র ক্যাম্প স্থাপন করে।এ সশস্ত্র বাহিনী গ্রামে গ্রামে হানা দিয়ে বিদ্রোহী কৃষকদের খুজতে শুরু করে। ৩১জানুয়ারী সকাল ১০ টার দিকে বিরিশিরি থেকে চার মাইল পশ্চিম-উত্তরে বহেরাতলি গ্রামে ইষ্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনী তল্লাসী করতে যায়। তখন সময় প্রায় সকাল সাড়ে দশটা। টংক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেতৃস্থানীয় লংকেশ্বর হাজং, গজেন্দ্র হাজং ও ইসলামাশ্বর হাজংকে সেদিন তারা খোঁজ করে। এদের বাড়ীতে না পেয়ে সশস্ত্র বাহিনী লংকেশ্বর হাজং এর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কুমুদিনী হাজংকে ধরে নিয়ে বিরিশিরি ক্যাম্পের দিকে রওনা হলে কুমুদিনী হাজং এর বাড়ীর এক মহিলা পাশের বাড়ীসহ এলাকার অন্যান্য বাড়িতে দৌড়ে গিয়ে খবর পৌছে দেয়। হাজং গ্রামগুলোতে খবর ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক হাজং নারী পুরুষ সশস্ত্র বাহিনীর পথরোধ করে কুমুদিনী হাজংকে ছেড়ে দিতে বলে। ইষ্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনী কুমুদিনী হাজংকে না ছেড়ে ক্যাম্পের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে সে সময় রাশিমনি হাজং এর নেতৃত্বে দিস্তামনি হাজং, সভামতি হাজং, রনে বালা হাজং, প্রভাতি হাজং, পঞ্চমনি হাজং সহ ১২জন হাজং মহিলা এগিয়ে আসেন। অগ্রভাগে গিয়ে কুমুদিনী হাজংকে ছাড়িয়ে নিতে এগিয়ে গেলে সশস্ত্র সেনারা নৃসংশভাবে গুলি চালায়। এতে রাশিমনি গুলিবিদ্ধহয়ে হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পেছনে থাকা পুরুষ দলের নেতা সুরেন্দ্র হাজং রাশিমনিকে ধরতে গেলে তাকেও নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় অন্যান্য হাজংরা ক্ষিপ্ত হয়ে ইষ্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেল বাহিনীর উপর আক্রমন চালায়। ক্ষিপ্ত হাজং পুরুষদের বল্লমের আঘাতে ঘটনাস্থলেই রাইফেল বাহিনীর দুজন সেনা নিহত হন। এদিকে অন্যান্য হাজংরা কুমুদিনী হাজংকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। কৃষক নারীদের মধ্যে শহীদ হিসেবে রাশিমনি হাজং এর নাম ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লেখা হলো। রাশিমনি শহীদ হওয়ার একমাস পড়েই স্ত্রী বিয়োগে কাতর রাশিমনির স্বামী পাঞ্জী লাল হাজং আগুনে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহুতি দেন। নিঃসন্তান হয়েও হাজংদের অধিকার ও নারী সংগ্রামের প্রতীক রাশিমনি হাজং তার সম্প্রদায়ে হাজং মাতা হিসেবে খ্যাত হন।
হাজংমাতা রাশিমণি মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট এর চেয়ারপার্সন খুশি কবীর এর নেতৃত্বে বহেড়াতলী গ্রামে শহীদ রাশিমণি‘র স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়। প্রতি বছর এই দিনে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। সাতদিন ব্যাপী উক্ত কর্মসূচীতে স্মৃতি সৌধে পুস্প স্তবক অর্পণ, দেশ বরেন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহনে আলোচনা সভা, রচনা, চিত্রাঙ্কন, হা-ডু-ডু খেলা সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামুলক অনুষ্ঠান, লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নারী পথিকৃতদের জীবনীর উপর ভিডিও স্ক্রিনিং এবং বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের স্টল প্রদর্শিত হবে।