নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশান হামলার ‘অন্যতম হোতা’ নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং জঙ্গি সাদ্দাম হোসেন নিহত হওয়ায় তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না বলে মনে করেছেন পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স টেরোরিজম ইন দ্য ওয়েব অব ইসলামিক স্টেট‘ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন আইজিপি।
সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন জিয়া রহমান।বিশেষ অতিথি ছিলেন নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মাগার্রিটা কুলেনারা।
গুলশান হামলার ‘অন্যতম হোতা’ নব্য জেএমবির নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান এবং উত্তরবঙ্গে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি সাদ্দাম হোসেন ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার বৃহস্পতিবার রাতে টেরোরিজম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
গতবছর জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার ঘটনার পর তদন্তের মধ্যে মারজানের নাম আসে। তাকে ওই হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলছিল পুলিশ।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সি জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। জুলাই মাসে পুলিশ আদালতে যে অভিযোগপত্র দেয়,তাতে সাদ্দামের নাম আসে।
অনুষ্ঠান শেষে সম্প্রতি এই দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার বিষয়ে আইজিপির প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা।
শহীদুল হক বলেন, “নুরুল ইসলাম মারজান গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ডদের একজন ছিল। একজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিল। সে ছিল অপারেশন কমান্ডার। নর্থবেঙ্গল ও ঢাকার আশপাশে যতগুলো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল সবগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল। তাকে পুলিশ খুঁজছিল। পরশু রাতে গোয়েন্দা পুলিশ তথ্য পায় যে সে ঢাকায় প্রবেশ করবে। সেখানে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়।
“আরেকজন জঙ্গি সাদ্দাম, সেও দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিল, নর্থবেঙ্গলে যত ঘটনা ঘটে.. সব ঘটনাই… তার নামে পাঁচটি মামলার চার্জশিট চলছে এবং পাঁচটি মামলার তদন্ত চলছে।”
পুলিশ প্রধান বলেন, “এই দুজনের নিহত হওয়ার পর গুলশান হামলার ঘটনার সঙ্গে যেহেতু তাদের সম্পৃক্ততা ছিল তাই অশব্যই গুলশান হামলার তদন্তের অগ্রগতি হয়েছে।”
এতে মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- “হবে না। কারণ আমাদের কাছে সব তথ্য আছে। মারজান এবং সাদ্দাম কিভাবে আসল, যা যা ঘটিয়েছে পুরো তথ্য আমাদের কাছে আছে। মামলার তদন্তে আর কোনো তথ্যের প্রয়োজন নেই। এখন আমরা চার্জশিট তৈরি করব।”
জঙ্গিদের টাকা দেশ ও বিদেশ থেকে আসত উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সরাসরিও টাকা আসে, আবার বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে তাদের টাকা আসে।
“তারা হচ্ছে হাইলি মোটিভেটেড জঙ্গি। তারা যখন যেখানে যায় চার-পাঁচজনকে দলে ভেড়াতে পারে। তবে তাদের রিহ্যাবিলিটেশনের সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।”
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। কিন্তু কিছু তরুণ ডিমোটিভেটেড হচ্ছে, কিছু সোশাল মিডিয়ার প্রপাগান্ডার মাধ্যমে। প্রত্যেকটি পরিবারের উচিত সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখা।”
জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, “শুধু পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন আছে। আপনাদের আশপাশে জঙ্গি সম্পৃক্ত কোনো তথ্য থাকলে পুলিশকে জানান, সহায়তা করুণ।“