রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

জামালপুরে বন্ধের পথে বেসরকারি বিনোদনকেন্দ্রগুলো

জামালপুর জেলায় বেসরকারি বিনোদনকেন্দ্র রয়েছে তিনটি। এখন নানা কারণে সমস্যায় জর্জরিত এই কেন্দ্রগুলো। বিশেষ করে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় বেড়াতে আসা মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই মালিকপক্ষকে গুণতে হচ্ছে আর্থিক লোকসান। ফলে এই পার্কগুলো যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ফলে সুস্থ ধারার বিনোদন থেকে সবাই বঞ্চিত হবেন বলেও ধারণা তাদের।

কর্মচারীরা জানান, পার্কগুলো বন্ধ হলে বেকার হয়ে পড়বেন শতশত কর্মচারী। মালিকপক্ষের দাবি, দুই-এক মাস যা আয় হয় তা দিয়ে তো পার্ক চালানো সম্ভব নয়। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারি সহায়তা পেলে তারা বিনোদন কেন্দ্রগুলো চালু রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

ময়মনসিংহ বিভাগের সর্ববৃহৎ ও জামালপুর জেলার অন্যতম বেসরকারি বিনোদন কেন্দ্র লুইছ ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্ক। জেলা সদরের বেলটিয়ায় অবস্থিত এই পার্কটি। শুরুর দিকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এখানে বেড়াতে আসতেন। কয়েক বছর ভালো চললেও বর্তমানে খুব বেশি মানুষ বেড়াতে না আসার কারণে ধুঁকছে এই কেন্দ্রটি।

এই পাকর্টি শুধু নয়, একই অবস্থা জেলার বাকি বেসরকারি বিনোদনকেন্দ্রগুলোর। কয়েক মাস আগে গড়ে কয়েক হাজার লোকের আগমন ঘটলেও এখন এসব কেন্দ্রগুলোতে হাতে গোনা কয়েকজন আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রিফাত মোল্লা বলেন, ‘মফস্বল এলাকার ভেতরে লুইছ ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্কটি মোটামুটি ভালো একটা বিনোদনকেন্দ্র। পার্কটি বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের জন্য ক্ষতি হবে। কারণ, এখানে বেড়ানোর তেমন জায়গা নেই। বেড়াতে আসা শিশুরাও আনন্দ করতে পারে এই পার্কের ভেতর।’

নওগা থেকে আসা সবুজ মাহমুদ বলেন, ‘যে পরিমাণ লোক সমাগম হওয়ার কথা ছিল, তার কিছুই নেই এখানে।’

ময়মনসিংহ থেকে আসা মুসা নামে একজন বলেন, ‘সুস্থ বিনোদন বলতে যা বোঝায়, তার সব ব্যবস্থায় এখানে আছে। তবে, বেড়াতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।’

লুইছ ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্কের কর্মচারী ফিরোজ বলেন, ‘এখানে অনেক রাইড রয়েছে। বেড়াতে আসা মানুষের সংখ্যা কম হওয়ায় রাইড চালানো সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে, ভ্রমণে আসা কয়েকজন ব্যক্তির জন্য রাইড চালু রাখতে গেলে অনেক টাকা খরচ হয়।’

পার্কটির ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল আহসান মানিক বলেন, ‘মালিক যে কোনো সময় পার্কটি বন্ধের ঘোষণা দিতে পারেন। মানুষজন না আসায় তিনি আমাদের বেতন দিতে পারছেন না। এখানে ৫৫ জন কর্মচারী আছেন। পার্ক বন্ধ হয়ে গেলে ৫৫টি পরিবার কষ্টের মধ্যে পড়বে।’

লুইছ ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্কের মালিক আতিকুল ইসলাম লুইছ বলেন, ‘ব্যাংকে আমাদের অনেক লোন রয়েছে। ব্যাংক আমাদের খুব চাপ দিচ্ছে। অফ সিজনে বিনোদনপ্রেমীরা আসেন না। ফলে পার্কের আয়ও হয় না। ব্যাংক আমাদের লোনের টাকা পরিশোধে যদি একটু সময় দেয়, তাহলে আমরা পার্ক ভালোভাবে চলার পর আস্তে আস্তে লোনের টাকা দিতে পারবো। এ ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।’

জামালপুর চাইল্ড সিটির পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘আমরা সারা বছরই খুবই সংকটের মধ্যে থাকি। বছরে দুই-এক মাস পার্ক ভালো চলে। সেটি দিয়ে তো আর কিছুই হয় না। সরকার কিছুটা সহায়তা করলে আমরা পার্ক চালু রাখতে পারবো। তা না হলে বিনোদনকেন্দ্রটি বন্ধ করা ছাড়া উপাই নেই।’

বিষয়টি জামালপুর জেলা প্রশাসনের কার্য পরিধির মধ্যে না থাকলেও জনস্বার্থে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগম।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *