নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম : ব্যক্তি জীবনে সাশ্রয়ী, মিতব্যয় ও সৎ থাকতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটতে। বলেছেন, টাকা-পয়সা জীবনের কিছু না। আর রাজনীতি টাকা অর্জনের হাতিয়ারও না।
বুধবার গণভবনে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান। সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে তিনি পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাবা-মা, দাদা-দাদি সবার কাছ থেকে একটা জিনিস শিখেছি, সেটি হলো মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটবে। এর শুধু একটাই অর্থ না। তুমি যে কেবল রাস্তা দেখছো সেটা না, এর অর্থ আরেকটা। তোমার জীবনের যতটুকু তোমার উপার্জন, যতটুকু তোমার আয়, যতটুকু তুমি ধারণ করতে পারো, সেটুকু নিয়েই তুমি চলবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপরের দিকে যদি তাকাও, আর কার কী আছে, কে কী করলো এ নিয়ে যদি চিন্তা করো, তাহলে জীবনে হোঁচট খেতে হবে, শান্তি নষ্ট হবে। জীবনে আর উন্নতি করতে পারবে না্।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব সময় নিজের যোগ্যতা, নিজের উপার্জন, নিজের যতটুকু প্রয়োজন সেই ভাবে মিতব্যয়ী হয়ে যদি চলতে পারো… অন্যদের সাহায্য করবে, যাদের কিছু নেই, তাদের সাহায্য করবে, যারা নিঃস্ব তাদের পাশে দাঁড়াবে, তাদের সেবা করবে। জনগণের সেবাটাই হচ্ছে তার চেয়ে বড়। সে দিকে মনযোগ দিয়ে তোমরা কাজ করবে।’
নেতাকর্মীদেরকে সৎ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সততাই তোমাকে মনোবল দেবে, শক্তি দেবে। আমি মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি একটা শক্তির বলে, যেটা বাবা-মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছি। আমাদের সন্তানদেরও যে শিক্ষা দিয়েছি, তোমাদেরকেও সেই একই শিক্ষা দেবো ‘
পড়াশোনার প্রতি মনযোগী হতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধনসম্পদ, টাকা, পয়সা, বাড়ি, গাড়ি, কিছুই থাকে না, থাকে কেবল বিদ্যা। এই বিদ্যাই দেবে সব পথ খুলে।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার পরিবেশ যেন ঠিক থাকে, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করার তাগাদা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি আমরা দেখতে চাই না। আমরা চাই না এ খানে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটুক।’ তিনি বলেন, ‘অতীতে এভাবে অনেক ক্ষতি করেছে। বছরের পর বছর সেশন জট। পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সময় চলে গেছে, চাকরিও পাওয়া যায়নি। এরকম একটা দুঃসময় গেছে। অনেক প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা সেই সেশন জট মুক্ত করতে পেরেছি। এখন নিয়মিত পরীক্ষা হয়।’
নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে ছাত্রলীগকে ভূমিকা রাখার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যেক এলাকায় নেউ নিরক্ষর আছে কি না, সেখানে শিক্ষার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমাদের এলাকায় ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে সরকার। সেখানে যাবে, খোঁজ নেবে, সেগুলো ঠিকমতো চলছে কি না। কমিউনিটি ক্লিনিকে যাবে, সেগুলো সচল আছে কি না তা দেখবে। প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে। আর আওয়ামী লীগ সরকার যে এগুলো করে দিয়েছে সেটাও মানুষকে জানানোর দায়িত্ব তোমাদের।’
মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কালো ব্যাধির মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে মাদক। এর থেকে সবাইকে দূরে থাকতে হবে। নেতৃত্বে যারা থাকবে, তাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, মাদক ধ্বংস করে দেয় একেকটা মানুষের জীবন, একেকটা পরিবার। তোমাদেরকে এই দায়িত্ব নিতে হবে। তোমরা নিজের এলাকায় যখন যাবে, অবশ্যই সেখানে ছাত্রদের মধ্যে এই সচেতনতা সৃষ্টি করবে, মাদকাসক্তি থেকে ছাত্ররা যেন দূরে থাকে, তারা যেন মন দিয়ে পড়ালেখা করে। মাদকাসক্তি মানসিক ক্ষতি করে, ব্রেন ড্যামেজ করে, ভবিষ্যত জীবনটাকে নষ্ট করে, মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। কেউ যেন মৃত্যুর মুখে ঢলে না পরে সে দিকে নজর রাখবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই নিজের নিজের এলাকায় করো বা যেখানেই যাও, সেখানে সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করো, তাহলেই আমরা বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ দূর করতে পারবো।’
রাজনীতি ভোগের বিষয় নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবে, ক্ষমতা শুধু ভোগ করা না, দেশকে যেন কিছু দিতে পারি, দেশের মানুষকে যেন কিছু দিতে পারি। সেটাই সব সময় চিন্তা থাকবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক নূর আলম
নির্বাহী সম্পাদক মোঃ রাসেল হোসেন
বার্তা সম্পাদক রাজন রায়
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত