সংবাদ শিরোনাম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক : এখন পর্যন্ত প্রশাসনের অনুমতি না মিললেও ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন উপলক্ষে রাজধানীতে পূর্বঘোষিত সমাবেশ আয়োজন করতে বদ্ধপরিকর দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত অনুমতি আদৌ মিলবে কি না, কিংবা শেষ মুহূর্তে মিললেও সফলভাবে সমাবেশ আয়োজন কতটুকু সম্ভব হবে, তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের ভেতরে আছে দুশ্চিন্তা।

৭ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ আয়োজনের কথা দলটির। এর আগে গত ৭ নভেম্বর দলটি ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লব’ স্মরণ কর্মসূচি  করতে পারেনি শেষ মুহূর্তে অনুমতি পাওয়ায়।

এদিকে মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ইউসূফ আলী জানিয়েছেন, ‘বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে বুধবার সাংবাদিকদের জানানো হবে।’

এ বছর দিবসটি পালন করতে ইতিমধ্যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এদিন সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ করবে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

গত বছর এদিন নয়পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার‌্যালয়ের সামনে সমাবেশ করেছিল দলটি।

তবে খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালতে যাবেন বলে এবার সেদিন রাজধানীতে কোনো কর্মসূচি রাখেনি দলটি।

৭ জানুয়ারি সমাবেশের যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়েও দোলাচলে আছেন নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, অতীতের মতো এবারও শেষবেলায় অনুমতি নিয়ে ‘ঝামেলা’ সৃষ্টি করার কৌশল নিতে পারে সরকার। তবে সরকার যতই কৌশল করুক, কর্মসূচি পালনে বিএনপি বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নেতারা।

এদিকে ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ও  ওই দিনই দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য আদালতের তারিখ ধার্য করার মধ্যেও ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি। খালেদা জিয়াসহ মামলার অন্য আসামিরা সেদিন সশরীরে আদালতে হাজির না হলে তাদের জামিন বাতিল করা হবে বলে এর আগে জানিয়েছেন বিচারক।

খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরার তারিখের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপি যাতে ওই দিন ঢাকায় কোনো কর্মসূচি পালন করতে না পারে, হয়তো সে জন্যই এমনটা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা। তবে ওই দিন চেয়ারপারসনের আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন হতে পারে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল  নির্বাচন বর্জন করে। বিএনপি ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-(এলডিপি), বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাকের পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, গণফোরাম, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশো আসনের মধ্যে ১৪৭টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৫৩ আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট এই নির্বাচনকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানালেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত করেনি। সেই থেকে বিএনপি প্রতিবছর ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। বিএনপির চিরবৈরী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

২০১৫ সালে দিবসটি পালন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। গুলশানের নিজ কার্যালয়ে দীর্ঘসময়ের জন্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে গত বছর পরিস্থিতি বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটিয়ে রাজধানীতে মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবেই নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করেছিল বিএনপি-আওয়ামী লীগ।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এর নামে বিএনপিকে কর্মসূচি করতে দেয়া হবে না। দলটির নেতারা বলছেন, মানুষ ‘হত্যা’ করার জন্য দেশের জনগণ বিএনপিকে কর্মসূচি পালন করতে দেবে না।

এদিকে ৫ জানুয়ারি রাজপথ দখল রাখার প্রয়াসে রাজধানীতে দুটি স্থানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, কর্মসূচির মাধ্যমে মূলত ঢাকার রাজপথ দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। শুধু ঢাকাতেই নয়, একই সঙ্গে দেশের সব জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনও অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে বলে দলটি থেকে ঘোষণা এসেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীতে কর্মসূচি পালন নিয়ে পুরোদমে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করি অতীতের মতো শেষ বেলায় না দিয়ে আগেভাগেই সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য অনুমতি দেবে পুলিশ।’

অন্যদিকে দলের মুখপাত্র ও  সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আশঙ্কা করছেন, আগের মতো এবারও পুলিশ অনুমতি নিয়ে সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তবে কর্মসূচি পালনের ব্যাপারে বিএনপি বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়েছেন রিজভী।

মঙ্গলবার দুপুরে রিজভী বলেন, ‘সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এবারও অনুমতি দেয়া নিয়ে গড়িমসির আশঙ্কা করছি। দেখি, শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যেকোনো মূল্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চায় বিএনপি। ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে তারা সংঘাতে জড়াতে চায় না। সংঘাত এড়াতে ওইদিন তারা ঢাকায় বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি রাখেননি। সংঘাত চায় না বলেই ৭ জানুয়ারি সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই সমাবেশে বড় ধরনের জমায়েত করার পরিকল্পনা করছে দলটি। শুধু তাই নয়, ঢাকার বাইরের নেতাদেরও শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা বিষয়টি সরকার অনুধাবন করবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি না পেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি কর্মসূচি পালনের বিকল্প চিন্তাও আছে জানা গেছে।


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম