নিজস্ব প্রতিবেদক : সাত খুন মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর অসুস্থতার অজুহাতে অনেক দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকে কাটিয়েছেন সাবেক র্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদ। গণমাধ্যমে ফলাও না হলে হয়তো হাসপাতালই হতো তার জেল-ঠিকানা। সেটি আর না হলেও কারাগারে যে খুব খারাপ ছিলেন না অনুমান করা যায়। কিন্তু সাত খুন মামলার রায়ে ফাঁসি হওয়ায় এখন তার সেই ‘সুদিন’ আর থাকল না। কয়েদির পোশাকে জায়গা হয়েছে কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে।
সাত খুন মামলায় সোমবার নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আরো নয় আসামির বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার পর নূর হোসেন, তারেক সাঈদ ও লেন্স নায়েক বেলাল হোসেনকে নিয়ে যাওয়া হয় গাজীপুরের ‘হাই সিকিউরিটি’ জেলখানা কাশিমপুর কারাগারে।
কারা সূত্র জানায়, সেখানে সাদার ওপর কালো ডোরাকাট কয়েদির পোশাক পরে বিরস বদনে কনডেম সেলে বন্দি নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের প্রধান দুই আসামি নূর হোসেন, তারেক সাঈদ।
কারাগার সূত্র জানায়, সোমবার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাদের আদালত থেকে কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারে নেয়া হয়। এ সময়ে কারাবিধি মোতাবেক তাদের প্রত্যেককে কয়েদিদের জন্য নির্ধারিত পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে প্রত্যেককে পৃথক কনডেম সেলে নেওয়া হয়। কারাগারে ঢোকানোর সময় তারা ছিলেন খুবই ‘মনমরা’।
জানতে চাইলে কাশিমপুর পার্ট-২ কারাগারের জেলার নাসির আহমেদ বলেন, ‘তিনজন আসামি কাশিমপুর পার্ট-২-এ এসেছে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে। নিয়মানুযায়ী তাদের কয়েদির পোশাক পরিয়ে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে। এ সময় তারা বিমর্ষ ছিলেন। তবে কেউই রায়ের ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ। পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
এর এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এই মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।
১১ মাস তদন্তের পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল র্যাবের সাবেক ২৫ জন কর্মকর্তা-সদস্যসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরের বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠিত হয়। এরপর প্রায় সাত মাসে ৩৮ কর্মদিবস মামলার বিচারকাজ চলে। গত ৩০ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা করেন।
সেই অনুযায়ী সোমবার রায় ঘোষণা করা হয়। রায় ঘোষণার সময় মামলার ৩৫ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা ২৩ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৭ জনই র্যাবের সাবেক সদস্য।