কেন্দুয়া সংবাদদাতা, ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম : নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশা। অসহায় গরীব রোগীদের দেখার কেউ নেই। সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে গ্রামঞ্চলের স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোর চালচিত্র। ৯ জানুয়ারী সোমবার কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র বেখৈরহাটীতে বেলা ১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন ডাক্তার বা কর্মচারীর দেখা মেলেনি। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দরজায় ঝুলছে তালা। ডাক্তারের সাক্ষাৎ পেতে বাইরে গরীব রোগীরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও তারা ডাক্তার বা কোন কর্মচারীর সাথে দেখা করতে না পেরে ফিরে গেছেন নিজ গন্তব্যে। রোগের ঔষধ না পেয়ে ফিরে যাওয়া অসংখ্য রোগীদের মধ্যে রঘুরাথপুর গ্রামের শাহ্ আলমের স্ত্রী শেফালী, আজিম উদ্দিনের স্ত্রী খালেদা, দৈলা গ্রামের শান্তু মিয়ার স্ত্রী বেদেনা, বেখৈরহাটী গ্রামের গনি মিয়ার স্ত্রী রাহিমা, গনি মিয়ার কন্যা সুলতানা ও রামনগর গ্রামের আবুল বাশারের স্ত্রী কল্পনা অন্যতম। তারা শিশু বাচ্চাদের কোলে নিয়ে এখানে এসে ডাক্তারের দেখা না পেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দীর্ঘদিন যাবৎ কোন ডাক্তার আসেন না। সপ্তাহে ১/২দিন এক জন আসলেও সামান্য কিছু ঔষধ দিয়ে দুপুর হতে না হতেই তিনি চলে যান। এর আগেও ২/৩দিন এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা দেওয়া দেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আশরাফুল হোসাইনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি অসুস্থ্য ও চাকরি শেষ পর্যায়ে চলে আসার কারণে কর্মস্থলে নিয়মিত আসতে পারেন না। বেখৈরহাটী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আঙ্গিনায় প্রস্রাব পায়খানা ও আবর্জনার স্তুপের দুর্গন্ধে আগত রোগীরা আরও রোগাক্রান্ত হয়ে যান। এখানে নিয়ম অনুযায়ী একজন মেডিকেল অফিসার, একজন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিষ্ট ও একজন এম.এল.এস.এস থাকার কথা থাকলেও সপ্তাহের ৫ দিনেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি থাকে তালা বদ্ধ। বিগত সময়ে ডাক্তার আমিনুর রহমান নামে একজন মেডিকেল অফিসার এখানে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেলেও বর্তমানে তিনি কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা যায়। ডাক্তার আমিনুর রহমান কেন্দুয়া থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে রামপুর বাজারে স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নিউ নাহার ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার নামে একটি ক্লিনিক চালু করেছেন। সেখানে তিনি নিয়মিত রোগী দেখেন। প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগী দেখে মোটা অংকের অর্থ উর্পাজনের জন্য তিনি চালু করেন অদক্ষ লোক দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন পরীক্ষাগার। অভিযোগ রয়েছে, সর্দি, কাশি অথবা সামান্য জ্বরে আক্রান্ত রোগীরাও এ ক্লিনিকে এলে তাদেরকে অহেতুক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। এর পরেও দিতে হয় তাকে ব্যবস্থাপত্রের জন্য রোগী প্রতি ৩০০/- টাকা। এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে ডাক্তার আমিনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বেখৈরহাটী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমার পোষ্টিং থাকলেও বর্তমানে সরকারী নির্দেশে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছি। আগামীতে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কোন ডাক্তারের দায়িত্ব পালন করতে হবেনা বলেও তিনি জানান। এছাড়া দলপা ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের রাজঘাট কমিউনিটি ক্লিনিকেও স্থানীয় গরীব রোগীরা গিয়ে ঔষধ না পেয়ে প্রায়ই ফেরত আসেন। রামনগর গ্রামের আব্দুর রাশিদ, মুখলেছ মিয়া, রোনা আক্তার ও নার্গিসসহ অনেকে এ অভিযোগ করেন। অভিযোগ রয়েছে, দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ প্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মীরা গরীবের স্বাস্থ্য সেবা না দিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর চিন্তায় ব্যস্ত থাকেন সারাক্ষন। স্বাস্থ্য সেবার বেহাল দশার সত্যতা স্বীকার করে দলপা ইউপি চেয়ারম্যান মো: আমিনুর রহমান খান পাঠান বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে গ্রামীন গরীব মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু ক্ষতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে এ ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের জন্য তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলেও তিনি জানান।