সংবাদ শিরোনাম

 

কিশোরগঞ্জে জেলার বিভিন্ন উপজেলার আখচাষিরা এবার আখ চাষ করে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। চলতি মৌসুমে আখ চাষ করে লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলনের মাঝামাঝি পর্যায়ে বিস্তীর্ণ আখের ক্ষেত দেখে খুশি হলেও এখন সেই হাসি ম্লান হয়ে গেছে চাষিদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে হঠাৎ করেই আখ ক্ষেতে লাল পচা রোগসহ বিভিন্ন রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আখে লাল বর্ণ দেখা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পুরো জমি আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে।

রোগের আক্রমণে আখ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং আখের সাইজ অনেক ছোট হওয়ায় এ বছর বাইরের জেলায় আগের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের চাষিরা। এ বছর এই উপজেলার ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হলেও রোগের আক্রমণের কারণে অধিকাংশ ক্ষেতের আখ নষ্ট হয়ে গেছে। এতে চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন।

বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নে মাছিমপুর গ্রামে আখচাষি এনামুল হক রাদি বলেন, বিগত বছরগুলোর ভালো ফলন দেখে এ বছরও ২ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করেছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন রোগের আক্রমণের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে ফসল। তার চালান উঠবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।

একই গ্রামের আখচাষি বাদল মিয়া জানান, প্রতিবছরের ন্যায় চলতি মৌসুমেও তিনি ৫ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই আখের জমিতে লাল বর্ণ রোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। এতে করে দ্রুত আখ মরে যাচ্ছে। তাই চলতি মৌসুমে আখ চাষে লাভের চেয়ে লোকসান গুনতে হবে।

আখচাষি হেলাল মিয়া জানান, এনজিও থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এবং নিজের ব্যাংকে জমানো টাকা দিয়ে ১০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করে লোকসানের মুখে পড়েছেন তিনি। তলা পচা ও আগা পচা রোগের আক্রমণে আখের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ বিষয়ে কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা তাদের খোঁজখবর নেননি বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার আখচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি গত ২৫ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছেন। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি এ বছর দুই একর জমিতে আখের চাষ করেছেন। কিন্তু রোগ ও পোকার আক্রমণে আখের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।

আখচাষি আকাশ মিয়া বলেন, গত বছর আখের ফলন কিছুটা ভালো হওয়ায় এবার ৬ বিগা জমিতে আখের চাষ করি। কিন্তু লাল পচা, মাথা পচা, গোড়া পচাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় এবার আখের ফলন অনেক কম। বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেও তেমন কোনো ফল হচ্ছে না। এসব রোগের আক্রমণে ক্ষেতের বেশিরভাগ আখ নষ্ট হয়ে গেছে।

আখচাষি খাইরুল ইসলাম বলেন, গত মৌসুমে সাড়ে চার বিগা জমিতে আখের চাষ করে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে লাভবান হয়েছি। তাই এবার সাড়ে নয় বিগা জমিতে আখ চাষ করেছি। কিন্তু লাল পচা রোগের আক্রমণে আখ বিবর্ণ হয়ে গেছে। এতে উৎপাদন কমে গেছে। আবার ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষকদের অসচেতনায় আখের জমিতে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত এই রোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও আখের বীজবাহিত রোগের কারণেও এই রোগগুলো হতে পারে। হঠাৎ করেই রোগ দেখা দেওয়ায় এবং আখ কাটা শেষের দিকে, তাই বর্তমানে ওষুধ প্রয়োগ করে তেমন কোনো লাভ হবে না। তবে এখনও যে জমির আখগুলো ভালো রয়েছে সেগুলো দ্রুত কেটে বাজারজাত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর জেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১০ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় ৫ হেক্টর, বাজিতপুরে ২৫ হেক্টর, কুলিয়ারচরে ১০ হেক্টর জমিতে আখের চাষ করা হয়েছে।


মতামত জানান :

 
 
 
কপিরাইট © ময়মনসিংহ প্রতিদিন ডটকম - সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | উন্নয়নে হোস্টপিও.কম