এমপি আনার হত্যার ঘটনায় তিন বাংলাদেশি আটক : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
চিকিৎসা করাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে নিহত ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা তিনজনই বাংলাদেশি।
বুধবার (২২ মে) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ধানমন্ডির বাসভবনে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন এবং ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারত গিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার দুদিন পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ আমরা পাইনি। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে তার মেয়ে আমাদেরকে বিষয়টি জানায়। বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ রাখছিল। সবশেষ ভারতীয় পুলিশের মাধ্যমে আমরা আজ নিশ্চিত হয়েছি, আনোয়ারুল আজিম খুন হয়েছেন। ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্য এবং আমাদের সন্দেহ দুটো মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা তিনজনকে আটক করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত চলছে। আনারের হত্যার সঙ্গে জড়িত তিনজনই বাংলাদেশি। এখন পর্যন্ত ভারতের কেউ জড়িত থাকার খবর আমরা পাইনি।
মন্ত্রী বলেন, ঝিনাইদহের ওই এলাকাটি অত্যন্ত সন্ত্রাস কবল সীমান্ত এলাকা। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে। আমরা শিগগিরই খুনের মোটিভ কি ছিল সেটি জানাবো। ভারতীয় পুলিশ আমাদের সহায়তা করছে। তবে আমরা আপনাদের নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি, তিনি (সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম) কলকাতার নিউটাউনে খুন হয়েছেন। একটি বাসায় তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।
তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মরদেহ এখনো আমাদের হাতে আসেনি। তদন্তের স্বার্থে আমরা আর কোনো তথ্য প্রকাশ করতে চাইছি না। তদন্ত শেষে খুনের উদ্দেশ্য কি ছিল, কারা জড়িত ছিল, সবকিছু আমরা জানাবো।
ভারতের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় পুলিশ আমাদের নিশ্চিত করেছে তিনি খুন হয়েছেন। যাদের আটক করা হয়েছে তারা এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা আরও কয়েকজনকে ধরার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এর নেপথ্যে যেসব কারণ সেগুলো তদন্ত করে বের করা হবে।
তার মরদেহ কবে নাগাদ দেশে ফিরিয়ে আনা হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, তার মরদেহ এখন কোথায় রয়েছে সেটি আমরা জানতে পারিনি। আমাদের কাছে যে সমস্ত সংবাদ রয়েছে সে সবের ভিত্তিতে কাজ করছি। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তারা সব ধরনের কো-অপারেশন করছেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল হবে এমন কোনো কিছু ঘটেনি। কারণ এই হত্যার সঙ্গে ভারত সরকার জড়িত নয়। এখন পর্যন্ত যে তথ্য তাতে দেখা গেছে হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাই বাংলাদেশের।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশে চিকিৎসার জন্য গিয়ে নিখোঁজের ছয়দিন পর কলকাতার একটি এলাকা থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কর্মকর্তারা কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন্সের একটি ফ্ল্যাট থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে।
সীমান্ত এলাকা ঝিনাইদহ-৪ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য (এমপি) ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল আজীম আনার।
১৯ মে আনোয়ারুল আজীমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আব্দুর রউফ ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ১১ মে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। কিন্তু এরপর ১৬ মে তার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ১৯ মে ডিবি কার্যালয়েও যান আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, তিনদিন ধরে আমার বাবাকে ফোনে পাচ্ছি না। তার মোবাইল ফোনটি মাঝে মাঝে খোলা পাই আবার মাঝে মাঝে বন্ধ পাই। পরে এই বিষয়ে আমি ডিবি প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেছেন বিষয়টি তিনি দেখছেন। পরে আজকে আমি ওনার কার্যালয়ে আসি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করছেন। বাবাকে ফোনে না পাওয়ার কারণেই মূলত আমি ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমি নিজেও ভারতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাব।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, গত ১৬ মে সকালের দিকে এমপি আনারের অবস্থান ছিল বিহারের মোজাফ্ফরাবাদ। সেখান থেকে পিএস রউফ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ফোনে কল করা হয়। তবে ওই ফোন কল প্রকৃত পক্ষে এমপি আনার করেছিলেন কি না তা নিয়ে নতুন করে ধূম্রজাল ছিল।
আনোয়ারুল আজীম আনার ঝিনাইদহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।