কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।
শনিবার (৩ আগস্ট) গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনও আলোচনায় রাজি। তারা যেকোনও সময় (গণভবনে) আসতে পারে। দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনায় যে পুলিশ সদস্য জড়িত তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি আটক সাধারণ ছাত্রদের মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য প্রস্তাবিত পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিল ঘোষণা করেন। এর আগে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের জন্য নতুন নামে পেনশন স্কিম চালু হবে বলেও জানানো হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার সঙ্গে যদি বসতে চায় তাহলে আমি বসতে রাজি। তারা যদি এখনও আসতে চায়, কথা বলতে চায়, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাদের কথা শুনতে চাই। তাদের দাবি কী কী বাকি আছে, আমি সেটাও শুনতে চাই এবং যেটা আমাদের সাধ্যে আছে সেটা আমি পূরণ করতে চাই। আমি এ সংঘাত চাই না।’
তিনি বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকারীরা আমার সঙ্গে যদি বসতে চায় আমি তাদের সঙ্গে বসবো, তাদের কথা শুনবো। তাদের দাবি এ পর্যন্ত যা মেনে নিয়েছি, আরও কিছু আছে কিনা সেটা আমাকে শুনতে হবে।’
পেশাজীবীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের সামনে আমি বলতে চাচ্ছি, যেটা দেশবাসীরও জানা উচিত। আমি কখনোই আমার দরজা বন্ধ করিনি, দরজা খোলা। যখনই আন্দোলনকারীরা কথা বলতে চায়, আমার সাথে আলোচনা করে সমাধান করতে চায়, আমি তাদের সাথে নিজেই বসতে রাজি।’
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ছিল। সার্বিক বিষয়ের চিন্তাভাবনা করে আমরা এই স্কিম চালু করেছি। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য বিভিন্নভাবে আমরা সুবিধা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রজাতন্ত্রের সব বেতনভুক্ত কর্মচারীর ক্ষেত্রে সার্বজনীন পেনশনে অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা বাতিল করে দিয়েছি। একেবারে বাতিল করে দিচ্ছি।’
বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু কারও দাবির অপেক্ষা রাখিনি। আমি চাই, যারা এর সঙ্গে জড়িত, সে যেই হোক সে পুলিশই হোক বা অন্য যে কেউই হোক, যারা অস্ত্রধারী যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাদের সবারই বিচার হোক, তদন্ত হোক। শুধু ঢাকা নয়, যতগুলো জায়গায় এ সব ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ হয়েছে, সেগুলো তদন্ত করে যথাযথ বিচার হবে। এজন্য আমি যে জুডিশিয়াল কমিশন করেছিলাম, সেখানে আরও দুজন জাজ নিয়োগ দিয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন করেছি। তাদের কর্মপরিধিও বাড়িয়ে দিয়েছি সময়ও বাড়িয়ে দিয়েছি। যাতে যথাযথভাবে এটা তদন্ত হয়।’
আমি চাই, এ ধরনের অন্যায় হত্যাকাণ্ডের যাতে যথাযথ তদন্ত হয়, এর বিচার হবে। আমি স্পষ্ট বলি হত্যাকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচার হবে। যারা জড়িত তাদেরকে তদন্ত করেই বের করা হবে। যারা অস্ত্রধারী, যেমন- রংপুরে একটা ঘটনা ঘটেছে। যে পুলিশ দায়ী সেই পুলিশকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে এবং তার বিচার হবে, যুক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রেফতার যারা হয়েছে তাদের মধ্যে যারা ছাত্র ছিল, তাদের সবাইকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাথে সাথে আমি এও নির্দেশ দিয়েছি, এর ভেতরে যারা নিরীহ আছে, তাদের সবাইকে এবং ছাত্র যারা অর্থাৎ একেবারেই যারা খুনের সাথে জড়িত না, এ সব ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত নয়, তাদের মুক্তি দেওয়া শুরু করুন এবং সেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যারা যারা দোষী, ঠিক তাদের চিহ্নিত করে তারা থাকবে (জেলে) এবং বাকিরা যাতে মুক্তি পায়, সে ব্যবস্থা কিন্তু আমরা করে দিয়েছি।’