নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিঙহ প্রতিদিন ডটকম : দলের ‘আকাইম্যা, ধান্দাবাজ, পদলোভী নেতা-কর্মীদের ‘নগদ’ ধোলাই’র উপর রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কোনো রাখ-ঢাক না করে ভরা মজলিসেই দলের বিভিন্ন ইউনিট, শাখা, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ‘আকাইম্যা’ নেতাদের শায়েস্তা করছেন কথার চাবুকে। উচিত কথা বলতে ছাড়ছেন না কাউকেই।
সূত্রমতে, পর পর দু’টি আন্দোলনে দলের তৃণমূলের সহজ-সরল খেটে খাওয়া সাধারণ মাঠকর্মী ও সমর্থক ছাড়া তথাকথিত ‘সেলিব্রেটি’ নেতাদের মাঠে না দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
অথচ পদের ভারে নুব্জ সেইসব নেতাই ঢাকায় আয়োজিত খালেদা জিয়ার বিভিন্ন কর্মসূচিতে লম্বা-চওড়া বক্তৃতা দেন নিয়মিত। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এসব নেতার রাজা-উজির মারা ধরনের বক্তব্য শুনে সম্প্রতি মুখের উপর জবাব দেওয়া শুরু করেছেন খালেদা জিয়া।
গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে মত বিনিময় করতে আসেন জিয়া পরিষদের নেতারা। প্রতিনিধি সম্মেলন শেষে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে মত বিনিময় ও বক্তৃতার সুযোগ পেয়ে আনন্দের বাঁধ ভাঙা জোয়ারে ভাসেন তারা।
বক্তৃতাকালে প্রত্যেকেই দাবি করেন, বিগত আন্দোলনে তিনি এবং তার অনুসারিরা নিজ নিজ এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ব্যাপক’ আন্দোলন করেছেন; নজিরবিহীন আন্দোলন করেছেন!
কবির মুরাদ তো বলেই ফেলেন- সারা দেশের মধ্যে কেবল তার জেলা মাগুরা ও খালেদা জিয়ার শ্বশুর বাড়ির এলাকা বগুড়া ছাড়া আর কোথাও কোনো আন্দোলন হয়নি।
সংগঠনের সভাপতির এমন বক্তব্যের পর জিয়া পরিষদের সারা দেশে থেকে আসা নেতারা খালেদা জিয়ার সামনেই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। মত বিনিময় সভায় শুরু হয় হৈ-হুল্লোড়!
পরে বক্তব্য দিতে গিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, জিয়া পরিষদ একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন। এখানে যারা আছেন, তাদের সবাই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সুতরাং এ সংগঠনের মূল কাজ হলো রিসার্চ করা; গবেষণা করা এবং সেগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরা।
জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আপনারা কী গবেষণা করেছেন, সেটা দেখতে চাই। কেবল বছর বছর প্রতিনিধি সম্মেলন করবেন। ঢাকায় এসে বক্তৃতা করে চলে যাবেন। ফিরে গিয়ে কোনো কাজ করবেন না, কোনো গবেষণা করবেন না-তা হবে না।
জানা গেছে, জিয়া পরিষদের নেতা নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন খালেদা জিয়া- সেই কবে থেকে কবির মুরাদকে সভাপতি দেখছি। আর কাউকে সভাপতি করা হয় না কেন? কেউ কি দায়িত্ব নিতে ভয় পান। নাকি পদ হারানোর ভয়ে একজনকেই বার বার সভাপতি করা হয়-সেটিও ভেবে দেখতে হবে।
খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের পর সভাস্থলেই শুরু হয় গুজুরগুজুর-ফুসুরফুসুর। অনেকেই বলতে থাকেন কবির মুরাদের ‘নগদ ধোলাই’ হয়েছে।
সূত্রমতে, খালেদা জিয়ার এমন ‘নগদ ধোলাইয়ের’ পর জিয়া পরিষদের নেতারা হতভম্ব হয়ে যান। বিব্রত নেতারা প্রোগ্রাম শেষে গুলশান কাযালয়ে কনফারেন্স রুমে বসে সিদ্ধান্ত নেন, আর কেউ দলের চেয়ারপারসনের সামনে ‘হামবড়া’ ভাব নেবেন না।
এর আগে ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে ছাত্রদলের নেতাদের একহাত নেন খালেদা জিয়া। ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যেখানেই যাই দেখতে পাই তোমরা নিজ নিজ ইউনিটের পক্ষে ‘উত্তর উত্তর’, ‘দক্ষিণ দক্ষিণ’ স্লোগান দাও। এটা দ্বারা তোমরা কী বোঝাতে চাও? এটা কোনো স্লোগান হলো?’
সে বক্তৃতায় ছাত্রনেতাদের বেশ ধমকাধমকিও করেন দলীয় প্রধান। তিনি বলেন, ‘তোমরা ছাত্র। তোমরা নতুন নতুন স্লোগান তৈরি করবে। আগের দিনের ছাত্ররা নিজেরাই স্লোগান তৈরি করত, পোস্টার তৈরি করত। এখন তোমাদের পোস্টার তৈরি করে দিতে হয়। তৈরি করে দেওয়া পোস্টারও ঠিক মতো লাগাও না। তার মানে তোমরা খালি স্বার্থটা খোঁজ।
শুধু যে সভা-সমাবেশেই তা নয়। কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে গিয়েও খালেদার তোপের মুখে পড়েছেন।
সূত্রমতে, সম্প্রতি গুলশান অফিসে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে যান মানিকগঞ্জের এক নেতা। তখন তিনি নিজের অনেকগুলো পদের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়ার কাছ থেকে ‘বাহবা’ নেবার চেষ্টা করেন।
কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন তাকে হতাশ করে দিয়ে বলেন, আপনি একাই যুবদল, স্বেচ্চাসেবক দল, জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপি, পৌরসভা বিএনপি- সব জায়গার পদ দখল করেন, তাহলে অন্যরা কোথায় যাবে? একটি পদ রেখে বাকিগুলো ছেড়ে দেবেন।
সম্প্রতিকালে এ রকম আরও নজীর স্থাপন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারাও এতে বিচলিত। তাদের কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়াকে এর আগে দলের নেতাদের ওপর এতোটা বিরক্ত হতে আর দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন-দলের প্রতি কোনো রকম আনুগত্য, দরদ ও ভালোবাসা ছাড়াই কেবল পদ-পদবীর লোভে আশপাশে ঘ্যান ঘ্যান করা নেতাদের উচিত শিক্ষার জন্য এমন ‘নগদ ধোলাই’ দিতে শুরু করেছেন খালেদা জিয়া।
জিয়া পরিষদের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কবির মুরাদ। ২১ জানুয়ারি পুনরায় নির্বাচিত হন তিনি।
সূত্র : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম