ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের নব গঠিত কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের যুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার দাবীতে সোমবার (২ অক্টোবর) দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সাবেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। নগরীর শহীদ ফিরোজ জাহাঙ্গীর চত্ত্বরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্টিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক রাকিবুল ইসলাম শাহীন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কমিটি করার জন্য জেলা থেকে যে তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল তার থেকে ২৬ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান কমিটিতে নেয়া হয়েছে রাজাকার পূত্র, ভিন্ন দলের নেতা, বহিরাগত, বিদেশী নাগরিক ও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীকে। সমাবেশে আয়োজকদের পক্ষ থেকে ১৬ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয় যারা বিতর্কিত।
রাকিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, জেলা কমিটি যে তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল, সেই তালিকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক কমিটি পরিবর্তন করেছে। যারা দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত তারা কমিটি থেকে বাদ পরেছে। তারা বর্তমান কমিটির বিতর্কিতদের নাম বাদ দেয়ার দাবী জানাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটিকে সদস্য হিসাবে স্থান পাওয়া মৃনাল মূর্মূর বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায়। নেত্রকোনা জেলা থেকে ভাড়া করা লোক এনে ময়মনসিংহ জেলা কমিটিকে অন্তভুক্ত করা ঠিক হয়নি। স্থান পাওয়া সদস্য আব্দুল মোতালেব লাল ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রব আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আগে অন্য দল করতেন। কমিটির উপদেষ্ট কায়সার আহমেদ কেন্দ্রীয় যুবলীগ থেকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কৃত এবং সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুল কখনোই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না এমনকি তারা রাজাকার পরিবারের সন্তান। সদস্য আনিসুজ্জামান ও সাংস্কৃতি সম্পাদক মফিজুন নূর খোকা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। কমিটিতে স্থান পাওয়া সহ-সভাপতি এম.এ ওয়াহেদের বিরুদ্ধে বলা হয়, ওয়াহেদ বিদেশে বসবাস করেন। তিনি মাত্র ৫ বছর আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। মাত্র ৫ বছর রাজনীতি করেই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হওয়ার বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক দিলরুবা শারমীন ও সদস্য নুরজাহান মিতুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁরা দুজনই জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আবু সাহাদাত সায়েম, উপ দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফা মামুনুর রায়হান ও বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেননি। তাঁদের প্রাথমিক সদস্য পদও নেই।
এদিকে, কমিটিতে স্থান পাওয়া বন ও পরিবেশক বিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৮০ সাল থেকে ছাত্রলীগ করি। বংশ পরম্পরায় আমরা আওয়ামী লীগ করি। অথচ মানবন্ধনকারীরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন, এসব প্রতিহিসংসামূলক মিথ্যা অভিযোগ।
কমিটিতে স্থান পাওয়া সাংস্কৃতি সম্পাদক মফিজুন নূর খোকা বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে আমি আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। আমি দীঘদিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। আমাকে কখনও দল থেকে বহিস্কার করা হয়নি। কেউ আমাকে দল থেকে বহিস্কারের কোন প্রমান দিতে পারবে না।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম বলেন, কেন্দ্রে পাঠানো তাদের তালিকা থেকে কয়েকটি নাম বাদ দেয়া হয়েছে এবং কেন্দ্র থেকে কয়েকটি নাম যুক্ত করেছে। পদবঞ্চিতরা এ মানববন্ধন করছেন। তবে ত্যাগী নেতাদের যথাসম্ভাব রাখতে হবে। বির্তকিত ও সুবিধাভোগীদের রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অবহিত করা হয়েছে।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক যুবলীগ সভাপতি প্রদীপ ভৌমিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মনজুর মোর্শেদ রাজু, জেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান টিটু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আফাজ উদ্দিনসহ কয়েক’শ নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরি কমিটি ও ২৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।